OrdinaryITPostAd

শিশুর খাবারের তালিকা_ কোন বয়সে কি খাওয়াবেন ?

শিশুর স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ জীবন গড়ার প্রথম ধাপ হলো সঠিক সময়ে সঠিক খাবার দেওয়া। প্রতিটি বয়সে শিশুর পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন হওয়ায় অভিভাবকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে বয়স অনুযায়ী খাদ্য তালিকা জানা।

এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কোন বয়সে কোন খাবার শিশুর জন্য উপযোগী এবং কীভাবে ধাপে ধাপে শিশুর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলবেন, যাতে সে ভালোভাবে বিকশিত হয় এবং রোগমুক্ত থাকে। পড়ুন এবং আপনার শিশুর জন্য সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করুন।

ভূমিকা

একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ভিত্তি নির্ভর করে তার প্রথম বছরগুলোর সঠিক পুষ্টির উপর। জন্মের পর থেকে বয়স অনুযায়ী শিশুর খাবারের তালিকা নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়েই গড়ে ওঠে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হজম শক্তি এবং সুস্থ জীবনের ভিত্তি। অনেকে জানেন না, কোন বয়সে কোন খাবার শিশুর জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর, ফলে ভুল খাদ্যাভ্যাস শিশুর স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই পোস্টে আমরা বয়সভিত্তিকভাবে শিশুর খাবারের তালিকা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি বিষয়ক দিকনির্দেশনা তুলে ধরবো, যাতে অভিভাবকরা সহজে বুঝতে পারেন, কখন কোন খাবার শিশুর জন্য উপযুক্ত এবং উপকারী। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার শিশুর বিকাশকে ত্বরান্বিত করে এবং তাকে করে তোলে স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ।

আরো পড়ুন: পুষ্টি উপাদান ও শরীরের উপকারিতা: জানুন প্রতিটি খাদ্য উপাদানের গুনাগুণ

০-৬ মাস বয়সে শিশুর খাবার

জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত একটি শিশুর একমাত্র উপযুক্ত খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। এই সময়টিতে শিশুর হজম ব্যবস্থার পরিপূর্ণ উন্নয়ন ঘটে না, তাই বুকের দুধই তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ, পুষ্টিকর ও সম্পূর্ণ খাদ্য। মায়ের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ এবং রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি থাকে, যা শিশুকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।

এই বয়সে শিশুকে কোনোভাবেই পানি, মধু, গুঁড়ো দুধ বা সেমি-সলিড খাবার দেওয়া উচিত নয়, কারণ এগুলো শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং ডায়রিয়া, হজমে সমস্যা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ উভয়ই জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং পরবর্তী ৬ মাস শুধুমাত্র স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে।

বুকের দুধ নিয়মিত এবং চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো উচিত – দিনে এবং রাতে যতবার চায়। এতে শিশুর ওজন বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ এবং সুস্থ জীবনযাত্রার ভিত্তি গড়ে ওঠে। তাই ০-৬ মাস বয়সে শিশুর খাবারের তালিকায় কেবল মায়ের দুধই থাকা উচিত এবং এটি শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।

আরো পড়ুন: ১০ মিনিটে রান্না করার সহজ রেসিপি 

৬-৮ মাস বয়সে শিশুর খাবার

৬ মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার পর শিশুর জন্য শুধু মায়ের দুধ যথেষ্ট নয়। এই সময় থেকেই তাকে ধীরে ধীরে পরিপূরক খাবার (Complementary Foods) দিতে শুরু করতে হয়, পাশাপাশি বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হয়। শিশুর হজম ক্ষমতা কিছুটা বাড়ে এবং সে নতুন স্বাদ ও গঠন বিশিষ্ট খাবারের সঙ্গে পরিচিত হতে শেখে। তাই ৬-৮ মাস বয়সে শিশুর খাবারের তালিকা পরিকল্পনা করা জরুরি, যাতে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকভাবে হয়।

শুরুতে খুব মসৃণ ও পাতলা খাবার দেওয়া উচিত, যেমন সেদ্ধ করা চালের মাড়, পাতলা খিচুড়ি, সেদ্ধ করে পেস্ট করা ডাল, আলু, কুমড়া বা কলা। প্রতিটি নতুন খাবার ২-৩ দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করুন, কোনো অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। এই বয়সে দিনে ২-৩ বার ছোট পরিমাণ খাবার খাওয়ানো যথেষ্ট এবং সঙ্গে সঙ্গে বুকের দুধও দিতে হবে।

শিশুকে খাবার খাওয়ানোর সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাবার যেন ভালোভাবে সেদ্ধ ও নরম হয় এবং কোনোভাবেই লবণ, চিনি বা মসলা দেওয়া যাবে না। শিশুর মুখে চামচ দিয়ে খাওয়ানো অভ্যাস করুন যাতে ধীরে ধীরে সঠিক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।

এই বয়সে শিশুকে বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি উপাদান জানাতে সাহায্য করলে ভবিষ্যতে তার পুষ্টির ঘাটতি কম হবে এবং সে সহজেই বিভিন্ন খাবারে অভ্যস্ত হবে। সঠিক পুষ্টির জন্য, ৬-৮ মাস বয়সে শিশুর খাবার পরিকল্পনা সময় মতো ও যত্ন সহকারে করা উচিত।

আরো পড়ুন: গরমে সহজ ও স্বাস্থ্যকর পাঁচটি খাবারের রেসিপি 

৮-১০ মাস বয়সে শিশুর খাবার

৮-১০ মাস বয়সে শিশুর হজম শক্তি আরও উন্নত হয় এবং সে ধীরে ধীরে আধা-কঠিন খাবারের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। এই বয়সে শিশুর পুষ্টি চাহিদা বেড়ে যায়, তাই বুকের দুধের পাশাপাশি দিনে অন্তত ৩-৪ বার পুষ্টিকর পরিপূরক খাবার দেওয়া প্রয়োজন। শিশুর খাদ্য তালিকায় এখন আরও বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে, যাতে সে বিভিন্ন স্বাদের প্রতি আগ্রহী হয় এবং তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।

এই বয়সে শিশুকে দেওয়া যেতে পারে সেদ্ধ ও মিহি করা খাবার যেমন ডিমের কুসুম, নরম ভাত, ডাল, আধা-ম্যাশ করা ফলমূল (যেমন কলা, পেঁপে, আপেল), সবজি (কুমড়া, গাজর, মিষ্টি আলু) ইত্যাদি। খিচুড়ি বা নরম ভাতের সঙ্গে সামান্য সেদ্ধ সবজি মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। খাবার অবশ্যই নরম ও মসৃণ হতে হবে যাতে শিশুর গিলতে সমস্যা না হয়।

এই বয়সে শিশুর হাত দিয়ে খাবার ধরার আগ্রহ তৈরি হয়, তাই নিরাপদ ও নরম কিছু খাবার (যেমন নরম কলা বা রান্না করা মিষ্টি আলু) হাতে ধরিয়ে দেওয়া যেতে পারে, যা সে নিজে নিজে মুখে নিতে শিখবে। এতে করে ফাইন মোটর স্কিল এবং খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার বড় বা শক্ত না হয়, যাতে শিশুর গলায় আটকানোর ঝুঁকি না থাকে।

লবণ, চিনি, মসলা এখনও সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। খাবার পরিচ্ছন্নভাবে তৈরি ও পরিবেশন করতে হবে। এই বয়সে শিশুকে দিনে ৩ বার প্রধান খাবার এবং ১-২ বার হালকা নাস্তা দেওয়া যেতে পারে, যেন সে ধীরে ধীরে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়। ৮-১০ মাস বয়সে শিশুর খাবার সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে শিশুর স্বাস্থ্য, শক্তি ও বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

আরো পড়ুন: নবজাতকের যত্নে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস 

১০-১২ মাস বয়সে শিশুর খাবার

১০-১২ মাস বয়সে শিশুর দাঁত গজাতে শুরু করে এবং সে ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো খাবার খাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই সময় শিশুর পুষ্টি চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায় এবং তার খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এই বয়সে শিশুর খাবারের তালিকা হতে হবে বৈচিত্র্যময়, পুষ্টিকর এবং শিশুর বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী উপযোগী।

এখন শিশুকে দিনে ৩ বেলা প্রধান খাবার এবং ১-২ বেলা স্ন্যাকস দেওয়া উচিত। তার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন: নরম ভাত, ডাল, সেদ্ধ ও কুচানো সবজি (যেমন গাজর, কুমড়া, মিষ্টি আলু), আধা-ম্যাশ করা ফলমূল (যেমন পাকা কলা, পেঁপে), ডিমের কুসুম, নরম রুটি বা পাউরুটি, সামান্য সেদ্ধ করা মাছ বা মুরগি (কাঁটা ছাড়া)। এখন থেকে শিশুকে অল্প পরিমাণে মসলা ও ঘরে তৈরি খাবারে অভ্যস্ত করে তোলা যেতে পারে, তবে চিনি ও লবণ এখনও সীমিত রাখাই ভালো।

শিশুকে হাত দিয়ে খাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে সে স্বনির্ভরতা শেখে এবং খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। নিজের হাত দিয়ে নরম খাবার ধরতে পারলে শিশুর fine motor skills বিকশিত হয়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার নরম ও ছোট আকারের হয়, যাতে গিলতে সমস্যা না হয় বা গলায় আটকে না যায়।

এই বয়সে শিশুর পানির প্রয়োজনও বেড়ে যায়, তাই বুকের দুধের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। খাবারের সময় শিশুকে পরিবারের সঙ্গে বসিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুললে সে সামাজিক আচরণ এবং খাবারের নিয়ম-কানুন দ্রুত শিখে ফেলে। ১০-১২ মাস বয়সে শিশুর খাবারের পরিকল্পনায় যত্ন ও নিয়মিততা বজায় রাখলে শিশুর সুস্থতা ও বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

আরো পড়ুন: কত দিনে নবজাতকের প্রথম টিকা দিতে হয় ।

১ বছর ও তার বেশি বয়সে শিশুর খাবার

১ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর শিশুর খাবারে আরও বৈচিত্র্য ও পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এই বয়সে শিশুর দেহের বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কের বিকাশ অনেক দ্রুত ঘটে, তাই তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুষম খাবার। এখন থেকে শিশুকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, যেন সে সামাজিকভাবে খাওয়ার নিয়ম-কানুন শিখে এবং খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়।

শিশুর দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত: ভাত, রুটি, ডাল, ডিম, মাছ, মুরগি, দুধ, বিভিন্ন রকমের সেদ্ধ সবজি, ফলমূল (যেমন কলা, আপেল, আম, পেয়ারা) এবং হালকা স্ন্যাকস। খাদ্য যেন সহজে চিবানো যায় এবং নরম হয়, তবুও এখন সে আস্তে আস্তে শক্ত খাবারেও অভ্যস্ত হতে শুরু করে।

শিশুকে দিনে ৩ বেলা প্রধান খাবার২ বেলা হালকা খাবার দেওয়া উচিত। শিশুর খাবারে এখন থেকে অল্প পরিমাণে লবণ ও মসলা ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার (জাংক ফুড) এড়িয়ে চলা জরুরি।

শিশুকে নিজে খেতে উৎসাহিত করুন এবং ধৈর্য ধরে তার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ সময় শিশুর খাবারে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ উপাদান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা তার হাড়, দাঁত, রক্ত এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক।

১ বছর ও তার বেশি বয়সে শিশুর খাবারের তালিকা পরিকল্পনার সময় পরিবারের সাধারণ স্বাস্থ্যকর খাবারকে শিশুর জন্য উপযোগী করে প্রস্তুত করুন। নিয়মিত ও পরিমিত খাওয়ানো, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন থাকা শিশুর সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আরো পড়ুন: ছোটদের নামাজ শেখানোর সেরা পদ্ধতি 

খাদ্য নির্বাচনের টিপস

শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য খাদ্য নির্বাচনের কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক বয়স অনুযায়ী শিশুর পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে, তাই খাবার নির্বাচনেও সচেতনতা প্রয়োজন। শিশুর খাবার অবশ্যই হতে হবে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য ও বয়স উপযোগী। বাজারের তৈরি খাবারের চেয়ে বাড়িতে তৈরি খাবার সবসময় বেশি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর।

খাবার নির্বাচন করার সময় প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে, সেটি যেন শিশুর জন্য অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী না হয়। নতুন কোনো খাবার প্রথমবার খাওয়ানোর পর অন্তত ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণে রাখুন। ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও চর্বি – এসব উপাদান সুষমভাবে খাদ্য তালিকায় রাখলে শিশুর পুষ্টি ঘাটতি দূর হয় এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

শিশুর খাদ্যে নিয়মিত রাখুন: পাকা কলা, পেঁপে, আপেল, গাজর, আলু, মিষ্টি কুমড়া, ডাল, ডিমের কুসুম, মাছ, দুধ ইত্যাদি। খাবার যেন রঙিন ও আকর্ষণীয় হয়, যাতে শিশু খেতে আগ্রহী হয়। অনেক সময় শিশুরা খেতে চায় না, তাই খাবার পরিবেশনের স্টাইলেও কিছু পরিবর্তন আনলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

শিশুকে দিনে অন্তত ৩ বেলা মূল খাবার এবং ১-২ বেলা হালকা খাবার দিন। কখনো জোর করে খাওয়াবেন না, বরং খাওয়াকে আনন্দদায়ক করতে চেষ্টা করুন। খাওয়ার সময় তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসিয়ে দিন, এতে করে শিশুর মধ্যে সামাজিক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।

খাদ্য নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সেটি যেন শিশুর বয়স, শারীরিক অবস্থা ও পুষ্টি চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে নির্ধারণ করা হয়। মনে রাখবেন, সঠিক খাবারই শিশুর জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয় এবং সুস্থ, সবল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।

কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সঠিক খাবারের পাশাপাশি জানা জরুরি, কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। অনেক সময় না জেনে শিশুকে এমন কিছু খাবার খাওয়ানো হয়, যা তার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে বা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে। তাই বয়স অনুযায়ী শিশুর খাদ্য তালিকা তৈরি করার সময় কিছু খাবার একেবারে বাদ দেওয়াই ভালো।

১ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য মধু বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এতে বোটুলিজম নামক একটি ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা মারাত্মক হতে পারে। এছাড়াও, গরুর দুধ (১ বছরের নিচে) শিশুর হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং এতে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

লবণ ও চিনি শিশুদের জন্য অত্যন্ত সীমিত পরিমাণে ব্যবহারযোগ্য। অতিরিক্ত লবণ কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং চিনি দাঁতের ক্ষয় ও ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাবার যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক স্বাদে দিন। প্রসেসড ফুড, ফাস্টফুড, কার্বোনেটেড ড্রিংক শিশুর খাদ্যতালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিন, কারণ এসব খাবারে অতিরিক্ত সোডিয়াম, প্রিজারভেটিভ ও কেমিক্যাল থাকে।

শিশুর জন্য বাদাম, আঙুর, কাঁচা গাজর বা বড় আকারের শক্ত খাবারও বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এগুলো গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই সবসময় খাবার নরম করে দিন এবং ছোট করে কেটে বা পিষে পরিবেশন করুন।

সবশেষে, শিশুর জন্য যে কোনো নতুন খাবার দেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি শিশুর অ্যালার্জি, হজম সমস্যা বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকে। ভুল খাদ্য নির্বাচনের কারণে শিশুর স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে, তাই সচেতনতাই নিরাপত্তা।

উপসংহার ও পরামর্শ

শিশুর সুস্থ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বয়সভিত্তিক খাবারের পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি। জন্মের পর থেকে প্রতিটি ধাপে শিশুর পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন হয়, এবং সেই অনুযায়ী সুষম ও পুষ্টিকর খাবার প্রদান করাই হলো সচেতন অভিভাবকের মূল দায়িত্ব। শুধুমাত্র পেট ভরানোর জন্য নয়, শিশুর খাবারে থাকতে হবে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও ফাইবার। এই পুষ্টিগুলো শিশুকে রোগমুক্ত রাখে এবং তার বুদ্ধি ও দেহের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে।

অভিভাবকদের উচিত শিশুকে বয়স অনুযায়ী ধাপে ধাপে নতুন খাবারে অভ্যস্ত করা এবং তার প্রতিক্রিয়া খেয়াল রাখা। কোনো অ্যালার্জি, হজমে সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। খাওয়ানোর সময় শিশুকে সময় দিন, জোর করবেন না এবং খাবারকে আনন্দময় করে তুলুন। এভাবে শিশুর মধ্যে খাবার গ্রহণে ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে উঠবে।

মনে রাখবেন, শিশু যখন ছোট তখনই তার খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে, যা তার ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তাই শুরু থেকেই সচেতনভাবে খাবারের তালিকা তৈরি করুন, পুষ্টিকর ও ঘরোয়া খাবারে অভ্যস্ত করুন এবং শিশুর প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য বজায় রাখুন। একটিমাত্র ভুল খাবারও তার শরীরের ক্ষতি করতে পারে, তাই প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতনতা প্রয়োজন।

এই পোস্টে বর্ণিত প্রতিটি ধাপ এবং টিপস আপনাকে সাহায্য করবে আপনার শিশুর জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা তৈরি করতে। শিশু সুস্থ থাকুক, বড় হয়ে উঠুক এক স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যতের দিকে – এই কামনায় প্রতিটি অভিভাবক যেন আরও যত্নবান ও পুষ্টিবান হন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪