পুষ্টির উপাদান ও শরীরের উপকারিতা: জানুন প্রতিটি খাদ্য উপাদানের গুণাগুণ
পুষ্টি হচ্ছে সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি,
প্রতিটি খাদ্য উপাদান রাখে শরীর গঠনে ভূমিকা।
ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন ও ফাইবারের সঠিক সমন্বয়,
জানুন কোন উপাদান কীভাবে রাখে আপনাকে সবল ও কর্মক্ষম।
- ভূমিকা
- খাদ্য ও পুষ্টি: মৌলিক ধারণা
- পুষ্টির প্রকারভেদ
- খাদ্যের উপাদানসমূহ ও তাদের কাজ
- ভিটামিন ও খনিজের বিশদ আলোচনা
- সুষম খাদ্য: উপাদান, প্রয়োজনীয়তা ও উদাহরণ
- বয়সভেদে পুষ্টির চাহিদা
- অপুষ্টি: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
- আধুনিক জীবনে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
- খাদ্যে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
- ইসলাম ও খাদ্যবিজ্ঞান
- দেশীয় খাদ্য উপাদানের পুষ্টিগুণ
- খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রস্তুতির গুরুত্ব
- খাদ্য নিরাপত্তা ও ভেজাল সমস্যা
- পুষ্টি শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা
- উপসংহার টানা
১. ভূমিকা
খাদ্য ও পুষ্টি মানুষের জীবনযাত্রার অন্যতম মূল ভিত্তি। খাদ্য কেবল দেহকে শক্তি দেয় না, এটি দেহের গঠন, রোগ প্রতিরোধ এবং দীর্ঘায়ুর সহায়ক। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা মানেই সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা। আধুনিক যুগে যখন জাঙ্ক ফুড ও রেস্তোরাঁর খাবারের প্রতি নির্ভরতা বাড়ছে, তখন পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।
২. খাদ্য ও পুষ্টি: মৌলিক ধারণা
খাদ্য বলতে এমন বস্তু বোঝায় যা গ্রহণের পর দেহে শক্তি উৎপন্ন করে এবং দেহের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখে।পুষ্টি হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাদ্য শরীরের কোষে শোষিত হয়ে প্রয়োজনীয় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। খাদ্য ও পুষ্টি একে অপরের পরিপূরক। শুধুমাত্র খাদ্য গ্রহণ করলেই হবে না, তা পুষ্টিকর কিনা সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পুষ্টির প্রকারভেদ
পুষ্টিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস: কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, পানি।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস: ভিটামিন ও খনিজ।
এই উপাদানগুলো দেহের বিভিন্ন কার্যক্রমে একে অপরকে পরিপূরকভাবে সাহায্য করে।
৪. খাদ্যের উপাদানসমূহ ও তাদের কাজ
কার্বোহাইড্রেট (শর্করা)
দেহের শক্তির মূল উৎস। শস্য, আলু, আটা, ভাত ইত্যাদি প্রধান উৎস।প্রোটিন (আমিষ)কোষ গঠন, হরমোন উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। মাছ, মাংস, ডাল, দুধ এর উৎস। চর্বি (ফ্যাট)শক্তি দেয় এবং শরীরকে উষ্ণ রাখে। ভালো চর্বি পাওয়া যায় বাদাম, তেল, ঘি, মাছ ইত্যাদি থেকে।
তরল ও পানি
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্ত চলাচল ও হজমে সহায়ক। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
৫. ভিটামিন ও খনিজের বিশদ আলোচনা
ভিটামিন
ভিটামিন A: চোখের স্বাস্থ্য। (গাজর, কলিজা)
ভিটামিন B: শক্তি উৎপাদন ও স্নায়ুতন্ত্র। (ডিম, মাছ, দুধ)
ভিটামিন C: রোগ প্রতিরোধ, ত্বকের জন্য। (লেবু, আমলকি)
ভিটামিন D: হাড়ের গঠন। (সূর্যালোক, দুধ, ডিম)
ভিটামিন E ও K: কোষ সংরক্ষণ ও রক্তজমাট।
খনিজ
ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত।
আয়রন: রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
আয়োডিন: থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ।
জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম: কোষের কাজ ও এনজাইম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ন।
৬. সুষম খাদ্য: উপাদান, প্রয়োজনীয়তা ও উদাহরণ
সুষম খাদ্য হলো এমন একটি খাদ্য পরিকল্পনা যেখানে শরীরের সঠিক বৃদ্ধি, শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এটি শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সুষম খাদ্যের উপাদানসমূহ
- শর্করা: প্রধান শক্তির উৎস, যেমন—ভাত, রুটি, আলু, চিনি।
- প্রোটিন: কোষ গঠন ও ক্ষয়補ণে সহায়ক, যেমন—ডিম, মাছ, মাংস, ডাল।
- চর্বি: শক্তির সংরক্ষিত উৎস, যেমন—তেল, ঘি, বাদাম।
- ভিটামিন: রোগ প্রতিরোধ ও শরীরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন—সবুজ শাকসবজি, ফলমূল।
- খনিজ লবণ: দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়ক, যেমন—দুধ, কলা, লবণ।
- পানি: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে।
- আঁশ: হজমে সহায়ক, যেমন—সবজি, ফলের খোসা, শস্য।
সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা
- শরীরের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখে।
- হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
- শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
সুষম খাদ্যের উদাহরণ
- একটি দুপুরের খাবার: ভাত, মুগ ডাল, সবজি ভাজি, ডিমের তরকারি, টমেটো সালাদ।
- একটি সকালের নাস্তা: দুই টুকরো রুটি, ডিম সেদ্ধ, কলা ও এক গ্লাস দুধ।
- একটি রাতের খাবার: খিচুড়ি, মাছ ভাজি, শাক, এক গ্লাস পানি।
প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রাণবন্ততা বজায় থাকে। এজন্য খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা এবং সঠিক পুষ্টির জ্ঞান থাকা জরুরি।
৭. বয়সভেদে পুষ্টির চাহিদা
মানুষের জীবনের বিভিন্ন ধাপে শরীরের গঠন, হরমোন, কর্মকৌশল এবং শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন হয়। তাই প্রতিটি বয়সে সুনির্দিষ্ট ও সুষম খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বিভিন্ন বয়সভেদে পুষ্টির চাহিদা তুলে ধরা হলো:
১. শিশু বয়স (০–১২ বছর)
- এই সময়ে শরীরের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, তাই প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন বেশি।
- দুধ, ডিম, ফলমূল, শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে দেওয়া উচিত।
- ভিটামিন A, D, আয়রন ও জিঙ্ক শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক।
২. কিশোর ও কিশোরী (১৩–১৯ বছর)
- এই সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে শক্তি চাহিদা ও প্রোটিনের চাহিদা বাড়ে।
- দুধ, দই, মাংস, ডিম, বাদাম ও শাকসবজি খাওয়া উচিত।
- মেয়েদের ক্ষেত্রে আয়রনের চাহিদা বেশি হয়, কারণ মাসিক শুরু হয়।
৩. প্রাপ্তবয়স্ক (২০–৫৯ বছর)
- শরীরের শক্তি চাহিদা নির্ভর করে কাজের ধরনের উপর।
- সুষম খাদ্য—শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ গ্রহণ করা উচিত।
- নিয়মিত পানি পান ও আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ হজমে সহায়ক।
৪. বয়স্ক (৬০ বছর ও তার বেশি)
- বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হজমশক্তি ও কার্যক্ষমতা কমে যায়।
- হালকা, সহজপাচ্য এবং আঁশযুক্ত খাদ্য বেছে নেওয়া উচিত।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D প্রয়োজন হাড়ের ক্ষয় রোধে সহায়ক।
৫. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা
- এই সময় অতিরিক্ত প্রোটিন, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়।
- পর্যাপ্ত পানি, শাকসবজি, দুধ ও ডিম খেতে উৎসাহ দেওয়া উচিত।
- নবজাতকের পুষ্টির জন্য মায়ের পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বশেষে, বয়সভেদে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং কর্মক্ষমতা উন্নত হয়। প্রতিটি বয়সে পুষ্টি চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হওয়া তাই অত্যন্ত জরুরি।
৮. অপুষ্টি: কারণ
অপুষ্টি হলো শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব বা অতিরিক্ততা জনিত একটি শারীরবৃত্তীয় সমস্যা, যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিভিন্ন রোগ, দুর্বলতা ও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অপুষ্টির প্রধান কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. অসমতুল্য ও অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ
- সুষম খাদ্যের অভাবে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পায় না।
- প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও ক্যালরির ঘাটতি অপুষ্টির মূল কারণ।
২. দারিদ্র্য ও খাদ্যসংকট
- আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না।
- বিশেষ করে গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীতে অপুষ্টির হার বেশি।
৩. অজ্ঞতা ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস না জানা ও অজ্ঞতার কারণে অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ে।
- শিশুদের শৈশবে সঠিক খাওয়াদাওয়া নিশ্চিত না হলে অপুষ্টি দেখা দেয়।
৪. সংক্রমণ ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ
- ডায়রিয়া, যক্ষা, হজমের সমস্যা ও অন্যান্য সংক্রমণ অপুষ্টির জন্য দায়ী।
- এই রোগগুলো শরীর থেকে পুষ্টি বের করে দেয় ও খাদ্য গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে।
৫. মা ও শিশুর যত্নে অবহেলা
- গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টির অভাব সন্তানকে অপুষ্ট করে তোলে।
- শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানো বা দেরিতে পরিপূরক খাবার দেওয়া অপুষ্টির কারণ হতে পারে।
৬. খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ
- নিম্নমানের ও ভেজাল খাদ্য গ্রহণ শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে।
- বাজারে রাসায়নিকযুক্ত ফলমূল ও খাদ্য উপাদান অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
এই সব কারণের সমন্বয়ে অপুষ্টি একটি সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে রূপ নেয়। একে প্রতিরোধে পুষ্টি শিক্ষা, নিরাপদ খাদ্য ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
৯. আধুনিক জীবনে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন
ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে ঝুঁকছেন, যা পরবর্তীতে স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ রোগের কারণ হচ্ছে।
প্রতিকার:
ঘরে রান্না করা খাবার খাওয়া
সময়মতো ও পরিমাণমতো খাওয়া
রিফাইনড সুগার ও চর্বি পরিহার করা
১০. খাদ্যে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
খাদ্যে অতিরিক্ত সোডিয়াম, প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম রঙ ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগ হতে পারে। সচেতনতার জন্য লেবেল দেখা, অর্গানিক খাদ্যের প্রতি আগ্রহ জরুরি।
১১. ইসলাম ও খাদ্যবিজ্ঞান
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানবজীবনের প্রতিটি দিক সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। খাদ্যগ্রহণও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলাম খাদ্য গ্রহণে যেমন হালাল-হারাম নির্ধারণ করেছে, তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পরিমিতিবোধ ও স্বাস্থ্য সচেতনতাকেও গুরুত্ব দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো আধুনিক খাদ্যবিজ্ঞান ও পুষ্টিবিজ্ঞানের সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ।
১. হালাল ও পবিত্র খাদ্য
- ইসলাম হালাল (অনুমোদিত) ও তাইয়্যিব (পবিত্র ও পরিস্কার) খাদ্য গ্রহণে উৎসাহ দেয়।
- কুরআনে আল্লাহ বলেন: “হে মানুষ, তোমরা পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র, তা খাও।” (সূরা বাকারা: ১৬৮)
- হালাল খাদ্য গ্রহণ শরীর ও আত্মার সুস্থতা বজায় রাখে, যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত।
২. পরিমিত খাদ্য গ্রহণ
- ইসলাম অপচয় ও অতিভোজন থেকে বিরত থাকতে বলে।
- রাসূল (সা.) বলেছেন: “মানুষের পেটের তুলনায় আর কোনো পাত্র খারাপভাবে পূর্ণ করা হয় না। কেবলমাত্র কিছু খাদ্য, যা তাকে টিকিয়ে রাখে।” (তিরমিজি)
- এই নীতিটি আধুনিক পুষ্টিবিদ্যায় “ক্যালোরি ব্যালেন্স” ধারণার সঙ্গে মিলে যায়।
৩. খাদ্য গ্রহণের আদব
- খাবারের আগে ও পরে হাত ধোয়া, বিসমিল্লাহ বলা এবং ডান হাতে খাওয়া ইসলামি আদব।
- একসাথে খাওয়া, কৃতজ্ঞ থাকা ও অপচয় না করাও ইসলামের নির্দেশ।
- এই অভ্যাসগুলো জীবাণু রোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
৪. নির্দিষ্ট খাবারের গুরুত্ব
- খেজুর: রাসূল (সা.) খেজুর খেতে উৎসাহ দিতেন। এতে প্রাকৃতিক চিনি, আঁশ ও খনিজ রয়েছে।
- জলপাই তেল: কুরআনে উল্লেখ আছে—এটি উপকারী, যা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
- কালোজিরা: রাসূল (সা.) বলেছেন: “কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের ঔষধ।”
৫. রোজা ও স্বাস্থ্য
- রমজানের রোজা আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি শরীরকে বিশ্রাম দেয় ও বিপাকক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে।
- আধুনিক বিজ্ঞানও intermittent fasting এর মাধ্যমে উপকারিতা স্বীকার করে।
সব মিলিয়ে, ইসলাম শুধু আধ্যাত্মিকতা নয়, খাদ্যাভ্যাসেও একটি বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি প্রস্তাব করে। ইসলামের খাদ্য নির্দেশনা মেনে চললে শরীর ও মন দুটিই সুস্থ থাকে।
১২. দেশীয় খাদ্য উপাদানের পুষ্টিগুণ
বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, যেখানে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন বিভিন্ন দেশীয় খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। সঠিকভাবে গ্রহণ ও প্রচার করা গেলে এগুলো অপুষ্টি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
১. চাল ও ভাত
- বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চাল। এতে উচ্চমাত্রায় শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) থাকে যা শরীরের শক্তি জোগায়।
- ব্রাউন রাইস বা আতপ চালে আঁশ, ভিটামিন বি ও মিনারেল বেশি থাকে।
২. ডাল
- দেশীয় মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা ডাল প্রোটিন ও আয়রনের ভালো উৎস।
- এগুলো সস্তা ও সহজপ্রাপ্য পুষ্টিকর খাবার।
৩. দেশীয় শাকসবজি
- পুঁইশাক, কলমিশাক, ডাঁটা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স, করলা প্রভৃতি শাকসবজিতে ভিটামিন A, C, আয়রন ও আঁশ থাকে।
- নিয়মিত এসব শাকসবজি খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. দেশীয় ফলমূল
- আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, তেঁতুল, জামরুল ইত্যাদি আমাদের ফলের ঝুড়িকে পুষ্টিকর করে তোলে।
- এই ফলগুলোতে ভিটামিন C, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ এবং প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে।
৫. মাছ
- ইলিশ, রুই, কাতলা, মাগুর, শিংসহ দেশীয় মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, আয়োডিন ও ভিটামিন D থাকে।
- “মাছে-ভাতে বাঙালি” কথাটিই বলে দেয় আমাদের খাদ্য-সংস্কৃতিতে মাছের গুরুত্ব।
৬. ডিম ও দুধ
- দেশি মুরগির ডিম ও গরুর দুধ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D-এর ভালো উৎস।
- বাচ্চা ও বৃদ্ধদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
৭. দেশীয় মসলা ও ভেষজ উপাদান
- আদা, রসুন, হলুদ, কালোজিরা, ধনিয়া ইত্যাদি শুধু স্বাদ বাড়ায় না, বরং রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর।
- এসব উপাদানে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ।
দেশীয় খাদ্য উপাদানগুলো সহজলভ্য, কম খরচে পাওয়া যায় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এগুলোর প্রচার ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা অপুষ্টি রোধ করে সুস্থ জাতি গঠনে অগ্রসর হতে পারি।
১৩. খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রস্তুতির গুরুত্ব
সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে খাদ্যের পুষ্টিমান কমে যায়। যেমন, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রান্না করলে ভিটামিন নষ্ট হয়।
নিয়ম:
সঠিক প্যাকেজিং
ফ্রিজে সংরক্ষণ
রান্নার সময় তেল ও মসলা পরিমিত রাখা
১৪. খাদ্য নিরাপত্তা ও ভেজাল সমস্যা
বাংলাদেশে খাদ্যে ফরমালিন, ডিটারজেন্ট, কৃত্রিম রং ইত্যাদি ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
সমাধান:
নিয়মিত পরীক্ষা
কঠোর আইন প্রয়োগ
জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম
১৫. পুষ্টি শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা
স্কুল পর্যায় থেকে পুষ্টি শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের সচেতন করে তোলা যায়। মা-বাবা, শিক্ষার্থী, কৃষক নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।
১৬. উপসংহার
খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি না করলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। তাই সময় এসেছে আমরা সবাই যেন সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে, খাদ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে একটি সুস্থ, সবল জাতি গড়ে তুলি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url