ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে যা কেউ বলে না
আপনি কি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইছেন, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না? অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সার প্রাথমিকভাবে নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যারা অভিজ্ঞ, তারা অনেক বিষয় আগে থেকেই জানেন, কিন্তু নতুনদের জন্য অনেক কিছুই বলা হয় না। এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে যা কেউ সাধারণত বলে না, সাথে রয়েছে কার্যকর টিপস ও কৌশল, যা আপনাকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করবে এবং সফল ফ্রিল্যান্সার হতে সাহায্য করবে। চলুন শুরু করা যাক এবং ধাপে ধাপে জেনে নিই ফ্রিল্যান্সিংয়ের পুরো বিষয়গুলো।
📑 পেজ সূচিপত্র
১ | ফ্রিল্যান্সিং আসলে কী? |
২ | শুরুতে কোন স্কিল বেছে নেবেন? |
৩ | প্রথম দিকে ইনকাম না হওয়ার বাস্তবতা |
৪ | প্রজেক্ট পাওয়ার আগে যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন |
৫ | ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের কৌশল |
৬ | টাইম ম্যানেজমেন্ট ও ডেডলাইন |
৭ | পেমেন্ট ও সিকিউরিটি বিষয়ক সতর্কতা |
৮ | দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার গড়ার টিপস |
৯ | উপসংহার ও বাস্তবিক পরামর্শ |
শুরুতে কোন স্কিল বেছে নেবেন?
ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফল হতে হলে সঠিক স্কিল বেছে নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ প্রতিযোগিতামূলক এই মার্কেটপ্লেসে যেকোনো কাজের চাহিদা ও আয়ের সম্ভাবনা আলাদা। তাই শুরুতেই এমন একটি স্কিল বেছে নিতে হবে যা আপনার আগ্রহ, সক্ষমতা এবং বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন— আপনি কী ধরনের কাজে আগ্রহী? উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার ডিজাইনের প্রতি ঝোঁক থাকে তবে গ্রাফিক ডিজাইন, UI/UX ডিজাইন হতে পারে ভালো শুরু। যদি লেখালেখি ভালো লাগে তবে কনটেন্ট রাইটিং, ব্লগিং, কপিরাইটিং হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত। আবার যারা প্রযুক্তি ভালোবাসেন তারা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কিংবা ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো স্কিল বেছে নিতে পারেন।
মনে রাখবেন, স্কিল বেছে নেওয়ার সময় শুধু জনপ্রিয়তার দিকে তাকাবেন না, বরং কোন ক্ষেত্রে আপনি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারবেন সেটাই বিবেচনা করুন। কারণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা একদিনে আসে না— নিয়মিত চর্চা, শেখা এবং ক্লায়েন্টদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে ক্যারিয়ার গড়ে ওঠে।
তাই শুরুতেই একাধিক স্কিলে হাত দেওয়ার চেষ্টা না করে একটি নির্দিষ্ট স্কিলে ভালোভাবে দক্ষ হয়ে ওঠা উত্তম। একবার যখন সেই স্কিলে ভালো দক্ষতা তৈরি হবে, তখন ধীরে ধীরে অন্যান্য সম্পর্কিত স্কিলে নিজের পরিধি বাড়াতে পারবেন। এভাবেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে একটি মজবুত ভিত্তি তৈরি করতে পারবেন।
প্রথম দিকে ইনকাম না হওয়ার বাস্তবতা
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শুরুতে অধিকাংশ নতুনদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো প্রথম দিকে নিয়মিত ইনকাম না হওয়া। অনেকেই মনে করেন যে প্রোফাইল তৈরি করা আর কিছু প্রজেক্টে বিড করলেই সঙ্গে সঙ্গে ডলার আসতে শুরু করবে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। শুরুতে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে, ক্লায়েন্টদের আস্থা অর্জন করতে না পারা এবং প্রোফাইলে রিভিউ কম থাকার কারণে প্রজেক্ট পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
তাই নতুনদের বুঝতে হবে যে ফ্রিল্যান্সিং কোনো “গেট রিচ কুইক” স্কিম নয়। এটি একটি ক্যারিয়ার, যেখানে ধাপে ধাপে উন্নতি করতে হয়। প্রথম কয়েক মাস বা কখনো কখনো কয়েক বছর পর্যন্তও আয় খুব সীমিত হতে পারে। এই সময়ে শেখার প্রতি মনোযোগী হওয়া, স্কিল উন্নত করা এবং প্রোফাইলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, প্রতিটি সফল ফ্রিল্যান্সারই শুরুর দিকে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রথম দিকে ইনকাম না হওয়া মানে ব্যর্থতা নয়, বরং এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই সময়ে ধৈর্য ধরে কাজ করলে, ক্লায়েন্টদের সাথে ছোট ছোট প্রজেক্ট সম্পন্ন করলে ধীরে ধীরে রিভিউ জমবে এবং প্রোফাইলের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। এর ফলেই এক সময় বড় প্রজেক্ট ও উচ্চ আয়ের সুযোগ আসবে।
তাই শুরুতেই বড় আয়ের স্বপ্ন দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং নিয়মিত প্র্যাকটিস, শেখা এবং ধৈর্য রাখাই ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে সবচেয়ে বড় মূলধন। একবার আপনার প্রোফাইল শক্তিশালী হলে ইনকাম আসা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
প্রজেক্ট পাওয়ার আগে যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন
ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে প্রজেক্ট পাওয়ার জন্য সঠিক কৌশল যেমন প্রয়োজন, তেমনি কিছু সাধারণ ভুল এড়িয়ে চলাও অত্যন্ত জরুরি। অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সার প্রথম দিকে অভিজ্ঞতার অভাবে কিছু ভুল করে বসেন, যার কারণে তারা কাঙ্ক্ষিত প্রজেক্ট পেতে দেরি করেন।
প্রথমত, অপ্রফেশনাল প্রোফাইল রাখা সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর একটি। অসম্পূর্ণ বায়ো, অনুপযুক্ত প্রোফাইল ছবি বা স্কিলস না দেওয়া আপনার প্রতি ক্লায়েন্টের আস্থা কমিয়ে দেয়। মনে রাখবেন, প্রোফাইলই আপনার প্রথম পরিচয়, তাই এটিকে যতটা সম্ভব প্রফেশনালভাবে সাজাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, জেনেরিক কাভার লেটার পাঠানো এড়িয়ে চলতে হবে। অনেকেই একই ধরনের মেসেজ কপি-পেস্ট করে সব ক্লায়েন্টকে পাঠান। এতে ক্লায়েন্ট বুঝতে পারেন যে আপনি তার প্রজেক্টটি ভালোভাবে পড়েননি। বরং প্রতিটি প্রজেক্টের জন্য আলাদা করে কাস্টমাইজড কাভার লেটার লিখুন।
তৃতীয়ত, অতিরিক্ত কম বা বেশি রেট অফার করাও ভুল। খুব কম রেটে কাজ করতে চাইলে ক্লায়েন্ট আপনার কাজের মান নিয়ে সন্দিহান হতে পারেন। আবার অতিরিক্ত বেশি রেট দিলে অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে প্রজেক্ট নাও পেতে পারেন। তাই বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রেট নির্ধারণ করা উচিত।
এছাড়াও, ডেডলাইন মেনে না চলা, প্রজেক্টের ডিটেইলস না পড়া এবং ক্লায়েন্টের সাথে ভুল যোগাযোগও প্রজেক্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রতিটি ধাপে সতর্ক থাকা এবং প্রফেশনাল আচরণ করা জরুরি।
সবশেষে বলা যায়, ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রজেক্ট পাওয়ার আগে এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যাবে। তাই ধৈর্য, মনোযোগ এবং প্রফেশনাল মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যান।
ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের কৌশল
ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফলতার অন্যতম মূল চাবিকাঠি হলো ক্লায়েন্টের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করার দক্ষতা। আপনি যত ভালো স্কিলসের অধিকারী হোন না কেন, যদি আপনার যোগাযোগের ধরন পেশাদার না হয়, তাহলে প্রজেক্ট পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই শুরু থেকেই ক্লায়েন্টকে আস্থা দেওয়ার মতোভাবে কথা বলা ও মেসেজ লেখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রথমত, স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্তভাবে কথা বলা শিখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় লম্বা ব্যাখ্যা দেওয়ার পরিবর্তে আপনার অভিজ্ঞতা, স্কিলস এবং কিভাবে প্রজেক্টে ভ্যালু অ্যাড করতে পারবেন সেটি ছোট করে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরুন। এতে ক্লায়েন্ট সহজে বুঝতে পারবেন আপনি তার জন্য কতটা উপযুক্ত।
দ্বিতীয়ত, প্রফেশনাল টোন ব্যবহার করা জরুরি। মেসেজ লেখার সময় অতি বন্ধুত্বপূর্ণ বা অতিরিক্ত ক্যাজুয়াল ভাষা এড়িয়ে চলুন। সঠিক ব্যাকরণ, ভদ্র ভাষা ও সম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করুন। এতে ক্লায়েন্ট বুঝবেন আপনি কাজের প্রতি সিরিয়াস।
তৃতীয়ত, ক্লায়েন্টের প্রয়োজন শুনে উত্তর দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। অনেকে নিজের কাজের দক্ষতা বেশি বোঝাতে গিয়ে ক্লায়েন্টের চাহিদা খেয়াল করেন না। বরং ক্লায়েন্ট কী চান সেটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, বুঝুন এবং তার ভিত্তিতে উত্তর দিন। প্রয়োজনে ছোট ছোট প্রশ্ন করে ডিটেইলস জেনে নিন।
চতুর্থত, সময়মতো রিপ্লাই দেওয়াও একটি বড় বিষয়। অনেক সময় ক্লায়েন্টরা একাধিক ফ্রিল্যান্সারের সাথে যোগাযোগ করেন। আপনি দেরি করলে সুযোগ হারাতে পারেন। তাই সক্রিয় থাকুন এবং দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার অভ্যাস করুন।
সর্বশেষে, ক্লায়েন্টের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। শুধু একবার কাজ পাওয়ার জন্য নয়, বরং প্রতিটি কথোপকথনে এমন আস্থা তৈরি করুন যাতে ভবিষ্যতে আবারও আপনাকেই কাজ দেন। মনে রাখবেন, একজন সন্তুষ্ট ক্লায়েন্ট নতুন ক্লায়েন্ট আনার জন্যও সাহায্য করতে পারেন।
সব মিলিয়ে, সঠিক যোগাযোগ কৌশল প্রয়োগ করলে আপনি শুধু নতুন প্রজেক্ট পাবেন না, বরং ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারে দীর্ঘমেয়াদে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
টাইম ম্যানেজমেন্ট ও ডেডলাইন
ফ্রিল্যান্সিং বা পেশাগত জীবনে সফল হতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাগুলোর মধ্যে একটি হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে কাজের মান নষ্ট হয়, ডেডলাইন মিস হয় এবং এর ফলে ক্লায়েন্টের আস্থা হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের জন্য কাজের সময় সঠিকভাবে ভাগ করে নেওয়া অপরিহার্য।
প্রথমত, কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। কোন কাজ আগে শেষ করতে হবে, কোন কাজ অপেক্ষা করতে পারে – তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন। এতে সময় বাঁচবে এবং কাজের চাপ কম মনে হবে। প্রয়োজনে টু-ডু লিস্ট বা ডিজিটাল টাস্ক ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, ডেডলাইনকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি প্রজেক্টের সাথে নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া থাকে। তাই কাজ শুরুর পর থেকেই সেই সময় মাথায় রেখে প্ল্যান তৈরি করুন। ডেডলাইনের এক বা দুই দিন আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন, যাতে প্রয়োজনে রিভিশনের জন্য সময় থাকে।
তৃতীয়ত, সময় নষ্টকারী অভ্যাস এড়িয়ে চলা শিখতে হবে। কাজ করার সময় সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করলে প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। তাই কাজের সময় মনোযোগী হওয়া ও ফোকাস ধরে রাখা জরুরি।
চতুর্থত, কাজ ও বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রাখাও টাইম ম্যানেজমেন্টের অংশ। অবিরাম কাজ করলে মানসিক চাপ বাড়ে এবং কাজের মানও কমে যায়। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিরতি নিন, এতে মন সতেজ থাকবে এবং কাজের গতি বাড়বে।
সর্বশেষে, ডেডলাইন মিস না করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ একজন ক্লায়েন্টের জন্য সময়মতো কাজ পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ জমা দিতে পারেন, তাহলে ক্লায়েন্ট আপনার উপর আস্থা রাখবে এবং ভবিষ্যতে আবারও কাজ দেবেন।
সব মিলিয়ে, টাইম ম্যানেজমেন্ট শুধু কাজ শেষ করার কৌশল নয়, বরং এটি পেশাদারিত্বের প্রতিফলন। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখলে আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে, ডেডলাইন মেনে কাজ জমা দিতে পারবেন এবং ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারে স্থায়ী সফলতা অর্জন করবেন।
৭. পেমেন্ট ও সিকিউরিটি বিষয়ক সতর্কতা
ফ্রিল্যান্সিং জগতে পেমেন্ট ও সিকিউরিটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সার প্রকল্পে কাজ শুরু করার আগে পেমেন্টের নিরাপত্তা যাচাই না করেই কাজ শুরু করে বসেন, যা ভবিষ্যতে প্রতারণার ঝুঁকি তৈরি করে। তাই কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই ক্লায়েন্টের প্রোফাইল যাচাই করা উচিত, বিশেষ করে তিনি আগে অন্য ফ্রিল্যান্সারদের পেমেন্ট করেছেন কি না তা দেখুন।
সবসময় এমন প্ল্যাটফর্মে কাজ করুন যেখানে Escrow system বা নিরাপদ পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে। এতে ক্লায়েন্ট কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে আপনার পেমেন্ট সিস্টেমে জমা রাখবে এবং কাজ শেষে সহজেই তা সংগ্রহ করতে পারবেন। সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার বা অজানা পদ্ধতিতে পেমেন্ট গ্রহণ করা এড়িয়ে চলা উচিত।
এছাড়া, কখনোই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন – জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক পাসওয়ার্ড, বা OTP শেয়ার করবেন না। পেমেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেপ্যাল, পায়োনিয়ার, ওয়াইজ বা আপওয়ার্ক, ফাইভার-এর মতো বিশ্বস্ত পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করুন। নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকুন, কারণ সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারকে নিরাপদ করতে পারবেন।
৮. দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার গড়ার টিপস
ফ্রিল্যান্সিং কেবল স্বল্পমেয়াদে আয় করার একটি মাধ্যম নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ করলে এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থায়ী ক্যারিয়ারে রূপ নিতে পারে। অনেকেই শুরুতে দ্রুত আয় করার দিকে মনোযোগ দেন, কিন্তু সময়ের সাথে নিজেদের দক্ষতা উন্নত না করলে তারা টিকে থাকতে পারেন না। তাই দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিরবচ্ছিন্ন শেখার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তি, সফটওয়্যার এবং বাজারের চাহিদার সাথে মানিয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। যেমন—যদি আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন দিয়ে শুরু করেন, তবে সময়ের সাথে সাথে UI/UX বা মোশন গ্রাফিক্স শেখা আপনার জন্য বাড়তি সুবিধা তৈরি করবে। একইভাবে ওয়েব ডেভেলপার হলে নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার চেষ্টা করুন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করা। একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট বা পোর্টফোলিও তৈরি করে সেখানে আপনার সেরা কাজগুলো প্রদর্শন করুন। পাশাপাশি লিঙ্কডইন, টুইটার বা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সক্রিয় থেকে পেশাদার সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
সবচেয়ে বড় কথা, ধৈর্য ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। প্রতিটি প্রজেক্ট সময়মতো এবং মানসম্পন্নভাবে শেষ করার চেষ্টা করুন, কারণ সন্তুষ্ট ক্লায়েন্টই আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে নিয়মিত কাজ এনে দেবে। সঠিক দক্ষতা, সুনাম ও অভ্যাস থাকলে ফ্রিল্যান্সিংকে আপনি কেবল একটি চাকরির বিকল্প নয়, বরং একটি টেকসই ও সফল ক্যারিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
৯. উপসংহার ও বাস্তবিক পরামর্শ
ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার, তবে এটি সহজ নয়। শুরুতে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে—প্রথম দিকে আয় না হওয়া, প্রজেক্ট না পাওয়া, ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্টে সমস্যা ইত্যাদি। কিন্তু ধৈর্য, নিয়মিত শেখা এবং সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে ধীরে ধীরে সাফল্যের দরজা খুলে যাবে। তাই প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে ফ্রিল্যান্সিংকে হালকাভাবে নিলে এটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে ফল পাওয়া যাবে না।
বাস্তবিক পরামর্শ হলো—প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা ভালোভাবে আয়ত্ত করুন এবং ছোট ছোট প্রজেক্ট দিয়ে শুরু করুন। একসাথে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা না করে একটি নির্দিষ্ট নীশে ফোকাস করুন। একইসাথে ক্লায়েন্টের সাথে ভদ্র ও প্রফেশনাল আচরণ বজায় রাখুন, কারণ দীর্ঘমেয়াদে সুনাম ও সম্পর্কই আপনাকে বেশি কাজ এনে দেবে।
অন্যদিকে টাইম ম্যানেজমেন্ট ও পেমেন্ট সিকিউরিটি বিষয়ে সচেতন থাকুন। ডেডলাইন মেনে কাজ সম্পন্ন করা ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট রাখে এবং নিয়মিত ইনকাম নিশ্চিত করে। আবার সঠিক প্ল্যাটফর্ম ছাড়া কোনো পেমেন্ট গ্রহণ করবেন না, এতে প্রতারণার ঝুঁকি কমে যায়।
সবশেষে বলা যায়, ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে একদিকে যেমন টেকনিক্যাল দক্ষতা বাড়াতে হবে, অন্যদিকে ব্যক্তিগত উন্নয়ন, ধৈর্য, এবং পেশাদারিত্বও সমানভাবে জরুরি। তাই যারা সত্যিই দীর্ঘমেয়াদে এই ক্যারিয়ারকে সফল করতে চান, তাদের উচিত প্রতিদিন একটু হলেও নতুন কিছু শেখা, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা এবং কখনো হাল না ছাড়া।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url