ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০ টি সহজ উপায় !
ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০টি সহজ উপায়
বাড়ির বিদ্যুৎ বিল কমানো এখন সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় আমরা ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তন করে সহজেই মাসিক বিলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারি। এই পোস্টে আমরা এমন ১০টি কার্যকরী এবং বাস্তবসম্মত উপায় আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার বিদ্যুৎ খরচ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। আজই শিখুন এবং চালু করুন সহজ এই কৌশলগুলো, আর বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে বাঁচান আপনার মূল্যবান টাকা ও পরিবেশ।
ইলেকট্রিক বা বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১০টি সহজ উপায়
১. এনার্জি ইফিশিয়েন্ট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন
বর্তমান যুগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো এনার্জি ইফিশিয়েন্ট (Energy Efficient) যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা। অনেক পুরনো ও প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী যন্ত্রপাতি এখনও আমাদের বাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা শুধু বিল বাড়াচ্ছে না, বরং পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত যন্ত্রপাতিগুলো যেমন: ইনভার্টার ফ্রিজ, LED টিভি, ফ্রন্ট লোডিং ওয়াশিং মেশিন, ইনভার্টার এসি ইত্যাদি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বেশ কার্যকর।
আপনি যদি নতুন যন্ত্রপাতি কেনার কথা ভাবেন, তবে বিউরো অব এনার্জি এফিসিয়েন্সি (BEE)-এর রেটিং দেখে কেনা উচিত। সাধারণত, ৫-তারকা রেটিংযুক্ত যন্ত্রপাতি কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে খরচ কমিয়ে আনে। যদিও প্রাথমিকভাবে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ বিলের ওপর এর প্রভাব ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য হয়। এছাড়াও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার এই ধরনের যন্ত্রপাতির উপর বিশেষ ভর্তুকি বা কর ছাড়ও দিয়ে থাকে।
সুতরাং, বিদ্যুৎ বিল কমাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় সচেতনভাবে এনার্জি ইফিশিয়েন্ট যন্ত্রপাতি নির্বাচন ও ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল আপনার ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস করবে না, বরং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেও সহায়তা করবে।
২. সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে LED লাইট ব্যবহার
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হলো সাধারণ বাল্বের পরিবর্তে LED লাইট ব্যবহার করা। প্রচলিত ইনসানডেসেন্ট বা ফিলামেন্ট বাল্বগুলো প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং অধিকাংশ শক্তি তাপ উৎপাদনে নষ্ট হয়। অপরদিকে, LED (Light Emitting Diode) লাইট তুলনামূলক অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং দীর্ঘস্থায়ীও হয়। একই পরিমাণ আলো দিতে LED বাল্ব সাধারণ বাল্বের তুলনায় প্রায় ৮০% পর্যন্ত কম শক্তি ব্যবহার করে।
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন রকমের LED বাল্ব, টিউব লাইট ও ডেকোরেটিভ লাইট পাওয়া যায়, যা ঘর, অফিস বা দোকানের জন্য উপযুক্ত। LED লাইটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলে এবং নষ্ট হবার হার খুবই কম। এতে করে বারবার লাইট পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না, ফলে এটি আর্থিক সাশ্রয়েও সহায়ক।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ব্যবহারকারী যদি ঘরের সব আলো LED-তে পরিবর্তন করেন, তাহলে তার মাসিক বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ২০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাই বিদ্যুৎ বিল কমাতে চাইলে আজই আপনার ঘরে থাকা পুরনো বাল্বগুলো পরিবর্তন করে এনার্জি সেভিং LED লাইট ব্যবহার শুরু করুন। এটি পরিবেশবান্ধব, খরচ সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী আলো সৃষ্টির একটি দুর্দান্ত সমাধান।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে Starlink ইন্টারনেট: পরিবর্তনের সম্ভাবনা ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ
৩. প্রয়োজন না থাকলে যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখুন
বাড়িতে বা অফিসে অনেক সময় দেখা যায়, টিভি, ফ্যান, লাইট বা কম্পিউটার চালু রেখেই আমরা ঘর থেকে বের হয়ে যাই বা অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এই অভ্যাসের ফলে প্রতিদিন অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রয়োজন না থাকলে যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা একটি অত্যন্ত সহজ অথচ কার্যকর অভ্যাস যা বিদ্যুৎ বিল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনার ঘরে প্রতিদিন যদি একটি ফ্যান বা একটি লাইট ৮-১০ ঘণ্টা অকারণে চলে, তাহলে বছরে হাজার টাকার ওপরে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিবার ঘর ছাড়ার আগে বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের পর তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে কম্পিউটার, চার্জার, টিভি বা গিজার-এর মতো যন্ত্রপাতি অফ না করলে সেগুলো “স্ট্যান্ডবাই মোডে” থেকেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যাকে বলা হয় ফ্যান্টম লোড বা ভ্যাম্পায়ার পাওয়ার।
এই সমস্যা সমাধানে আপনি স্মার্ট পাওয়ার স্ট্রিপ বা অটো টাইমার প্লাগ ব্যবহার করতে পারেন, যা নির্দিষ্ট সময় পর যন্ত্রপাতিকে নিজে থেকেই বন্ধ করে দেয়। এই ছোট ছোট অভ্যাস এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আপনাকে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল কমাতে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করতে পারে। তাই আজ থেকেই অভ্যাস করুন—প্রয়োজন শেষে যন্ত্র বন্ধ রাখা।
আরো পড়ুন: ঘরে বসেই ফ্রি কোর্স করে চাকরি _ ৭ টি সাইট যেগুলো বদলে দিবে আপনার ভবিষ্যৎ
৪. দিনের আলোকে কাজে লাগান
প্রাকৃতিক আলো আমাদের জন্য একদম বিনামূল্যে পাওয়া যায়, অথচ অনেকেই তা যথাযথভাবে ব্যবহার করি না। দিনের বেলা ঘরে বিদ্যুৎ চালু না করে সূর্যের আলো ব্যবহার করা একটি কার্যকর অভ্যাস, যা বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করে। দিনের আলোকে কাজে লাগানো মানে শুধু অর্থ সাশ্রয় নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য এবং মানসিক প্রশান্তির জন্যও উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক আলোয় কাজ করলে চোখের চাপ কমে, মনোযোগ বাড়ে এবং দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি হয়।
আপনার ঘরের জানালা, বারান্দা কিংবা ছাদের অংশ যেন পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করুন। পর্দা বা রোদ আটকানো জিনিসগুলিকে দিনের বেলায় সরিয়ে রাখুন যাতে বাড়ির ভেতর বেশি আলো আসে এবং আপনাকে লাইট জ্বালাতে না হয়। বিশেষ করে বসার ঘর, রান্নাঘর ও পড়ার ঘরের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি চাইলে লাইট রিফ্লেক্টিং রঙ বা আলো প্রতিফলিতকারী পর্দা ব্যবহার করতে পারেন যাতে কম আলোতেও ঘর আলোকিত দেখায়।
দিনের আলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি শুধু বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয় করতে পারবেন না, বরং পরিবেশবান্ধব জীবনধারার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন। তাই আজ থেকেই চেষ্টা করুন দিনের আলোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে লাইট ব্যবহার না করার। এটি একটি সহজ অথচ অত্যন্ত ফলদায়ক অভ্যাস।
৫. বুদ্ধিমত্তার সাথে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার
গ্রীষ্মকালে এয়ার কন্ডিশনার (AC) আমাদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ আরামদায়ক প্রযুক্তি হলেও এটি একটি প্রধান বিদ্যুৎ খরচকারী যন্ত্র। তাই বুদ্ধিমত্তার সাথে AC ব্যবহার করলে আপনি সহজেই বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারেন। অনেকেই সারাদিন ধরে AC চালিয়ে রাখেন, যা অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবর্তে, ঘরের তাপমাত্রা বুঝে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্ধারিত টেম্পারেচারে AC ব্যবহার করাই হবে সেরা কৌশল।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, ঘরের তাপমাত্রা ২৫–২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করলে আরামদায়ক আবহাওয়া বজায় রাখা যায় এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এ ছাড়াও, ইনভার্টার প্রযুক্তির AC ব্যবহারে বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই কমে আসে, কারণ এটি ঘরের তাপমাত্রা স্থির রাখে এবং বারবার কম্প্রেসর চালু-বন্ধ করে না। ঘরের জানালা ও দরজা বন্ধ রাখা, পর্দা টেনে রাখা এবং সিলিং ফ্যানের সহায়তা নেওয়া AC ব্যবহারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে ও খরচ কমায়।
এছাড়াও, নিয়মিতভাবে AC’র ফিল্টার পরিষ্কার করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর সার্ভিসিং করানো AC-এর কর্মদক্ষতা বজায় রাখে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে। মনে রাখবেন, বুদ্ধিমত্তার সাথে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি শুধু বিলই কমাবেন না, বরং পরিবেশের প্রতিও সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করবেন।
৬. পাখা ও প্রাকৃতিক বাতাস ব্যবহার করুন
পাখা ও প্রাকৃতিক বাতাস ব্যবহার করা হলো এমন একটি সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাস, যা ঘরের ঠান্ডা বজায় রাখে এবং বিদ্যুৎ বিল কমাতে সাহায্য করে। অনেকেই দিনের বেলা অপ্রয়োজনে এয়ার কন্ডিশনার বা কুলার ব্যবহার করেন, অথচ একটু সচেতন হলেই সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান এবং জানালা খুলে বাইরে থেকে প্রবাহিত হওয়া ঠান্ডা হাওয়া ব্যবহার করে ঘর ঠান্ডা রাখা যায়। এতে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, তেমনি ঘরের বাতাসও বিশুদ্ধ থাকে।
আপনার ঘরের মধ্যে বায়ু চলাচলের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা জরুরি। এজন্য জানালা, দরজা এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। দিনের শুরুতে ও সন্ধ্যাবেলায় বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া প্রবেশ করাতে জানালা খুলে রাখা যেতে পারে। একইসাথে ছাদ বা দেয়ালের তাপ প্রতিরোধে গাছ লাগানো, রঙের মধ্যে হালকা রঙ নির্বাচন করা এবং জানালায় সানশেড ব্যবহার করাও অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।
স্মার্ট হোমে পাখার সাথে টাইমার বা রিমোট কন্ট্রোল ফিচার যুক্ত করে আরও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। মনে রাখবেন, একটি ফ্যান ঘণ্টায় মাত্র ৭৫-৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যেখানে একটি এসি ব্যবহার করে কয়েক হাজার ওয়াট। তাই গরমে আরাম পেতে এবং বিদ্যুৎ বিল বাঁচাতে পাখা ও প্রাকৃতিক বাতাস ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে টেকসই সমাধান।
৭. যন্ত্রপাতি আনপ্লাগ করুন ব্যবহারের পর
অনেকেই জানেন না যে, যন্ত্রপাতি বন্ধ করলেও যদি সেগুলো পাওয়ার সকেটে প্লাগ করা থাকে, তবে সেগুলো কিছু পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে থাকে। এই অদৃশ্য শক্তি অপচয়কে বলে “স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার” বা “ফ্যান্টম লোড”, যা বছরে আপনার বিদ্যুৎ বিলের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। যন্ত্রপাতি আনপ্লাগ করা হলো একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাস, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায় এবং যন্ত্রপাতির দীর্ঘস্থায়িতাও বৃদ্ধি পায়।
বিশেষ করে চার্জার, রাউটার, টিভি, মাইক্রোওয়েভ, ল্যাপটপ অ্যাডাপ্টার, ব্লেন্ডার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর unplug না করলে সেগুলো অবচেতনভাবে বিদ্যুৎ খরচ করে যেতে থাকে। একটি চার্জার বন্ধ থাকা অবস্থাতেও বছরে প্রায় ১–২ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে। যদিও এটি শুনতে সামান্য মনে হয়, কিন্তু ঘরে যদি অনেকগুলো যন্ত্র একইভাবে সংযুক্ত থাকে, তবে সেটি মোট বিদ্যুৎ খরচকে অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই সমস্যার সমাধান হিসেবে আপনি মাল্টি প্লাগের সাথে সুইচ ব্যবহার করতে পারেন, যাতে একসাথে একাধিক ডিভাইস দ্রুত বন্ধ করা যায়। এছাড়াও বাজারে স্মার্ট সকেট পাওয়া যায়, যা নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রপাতিকে বন্ধ করে দেয়। মনে রাখবেন, ছোট ছোট অভ্যাস যেমন আনপ্লাগ করার অভ্যাস গড়ে তুললে তা দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ বিল হ্রাস এবং নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করে।
৮. বিদ্যুৎ খরচ মনিটর করুন
বিদ্যুৎ বিল কমাতে চাইলে প্রথম ধাপ হলো আপনার বিদ্যুৎ খরচ মনিটর করা। অনেকেই মাস শেষে বিল দেখে শুধু পরিমাণটা জানেন, কিন্তু কোথায় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, তা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকেন। আপনি যদি প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে কোন কোন যন্ত্রপাতিতে কতো ইউনিট খরচ হচ্ছে তা লক্ষ্য করেন, তাহলে সহজেই বুঝতে পারবেন কোন অংশে বেশি বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র সচেতনতা তৈরি করে না, বরং সুনির্দিষ্টভাবে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার হ্রাস করতেও সহায়তা করে।
বর্তমানে বাজারে এমন অনেক ডিজিটাল এনার্জি মিটার ও স্মার্ট প্লাগ পাওয়া যায়, যেগুলো নির্দিষ্ট যন্ত্রপাতির বিদ্যুৎ ব্যবহার রিয়েল-টাইমে মনিটর করতে সাহায্য করে। এসব ডিভাইস মোবাইল অ্যাপে সংযুক্ত হয়ে আপনাকে জানিয়ে দেয় কোন যন্ত্র কতক্ষণ চালু ছিল এবং কতো ইউনিট ব্যবহার করেছে। এর ফলে আপনি জানতে পারবেন আপনার টিভি, ফ্রিজ, এসি, কিংবা ওয়াশিং মেশিন কেমন পারফর্ম করছে এবং তা কি বেশি বিদ্যুৎ খরচ করছে কিনা।
এছাড়াও, আপনি চাইলে প্রতি মাসের বিল সংরক্ষণ করে মাসিক খরচের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারেন। এতে করে কোনো মাসে হঠাৎ খরচ বেড়ে গেলে আপনি সহজেই কারণ খুঁজে বের করতে পারবেন এবং পদক্ষেপ নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য নিয়মিত খরচ মনিটর করা একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় যা আপনাকে দায়িত্বশীল এবং সচেতন ব্যবহারকারীতে পরিণত করে।
৯. সোলার প্যানেল ব্যবহারে চিন্তা করুন
বর্তমান সময়ে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উপায় হলো সোলার প্যানেল ব্যবহার। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘনঘন সমস্যা দেখা দেয় বা বিল খুব বেশি আসে, সেসব ক্ষেত্রে সোলার সিস্টেম হতে পারে একটি দারুণ সমাধান। সূর্যের আলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা শুধু আপনার মাসিক বিলই কমাবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনাকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ নির্ভরশীলতা থেকেও মুক্ত করতে পারে।
বর্তমানে দেশে নেট মিটারিং সিস্টেম চালু হওয়ায় আপনি চাইলে বাড়ির ছাদে লাগানো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে পাঠিয়ে বিলের ওপর ছাড় পেতে পারেন। যদিও শুরুতে কিছুটা ব্যয়বহুল মনে হতে পারে, তবে একবার সিস্টেম ইনস্টল করে নিলে এটি ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং প্রায় ৫-৭ বছরের মধ্যেই পুরো বিনিয়োগের টাকা উঠে আসে। এতে বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৬০%-৮০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকান, অফিস ইত্যাদিতে সোলার সিস্টেম একটি কার্যকরী ও লাভজনক সমাধান হতে পারে। সরকারও এখন সোলার ব্যবহারে ভর্তুকি ও প্রণোদনা প্রদান করছে। তাই বিদ্যুৎ বিল কমাতে চাইলে আজ থেকেই সোলার প্যানেল ব্যবহারের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করুন। এটি শুধুমাত্র খরচ কমাবে না, বরং পরিবেশ রক্ষায়ও আপনার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
আরো পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ইউটিউব ভিডিও বানানোর চূড়ান্ত গাইড: শুরু থেকে সফলতা পর্যন্ত!
১০. নিয়মিত যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ করুন
যন্ত্রপাতির দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিশ্চিত করতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধুলোময়, অপরিষ্কার বা খারাপ অবস্থায় থাকা যন্ত্রপাতি বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে এবং দ্রুত নষ্ট হতে পারে। তাই আপনার ফ্রিজ, এসি, ফ্যান, ওয়াশিং মেশিনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়মিত পরিষ্কার ও সার্ভিস করানো উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, এসির ফিল্টার পরিষ্কার রাখা হলে এটি কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং ভালো শীতলতা দেয়। একইভাবে, ফ্রিজের গ্যাস লেভেল ঠিকমত থাকলে সেটি কার্যকরভাবে কাজ করে এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় রোধ হয়। নিয়মিত যন্ত্রপাতি পরীক্ষা ও মেরামত করালে যন্ত্রপাতির আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং আপনি অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে পারেন।
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল কমানোর পাশাপাশি আপনি যন্ত্রপাতি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবেন। তাই, আপনার যন্ত্রপাতির জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রফেশনাল সার্ভিসিং ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সচেতন থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url