ফেসবুকে পোস্ট করার সেরা সময় কখন?
📅 ফেসবুকে পোস্ট করার সেরা সময় কখন?
সঠিক সময়ে ফেসবুকে পোস্ট করা আপনার কনটেন্টের রিচ, এনগেজমেন্ট এবং ভিউ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো কখন পোস্ট করা সবচেয়ে ভালো এবং কীভাবে টাইমিং অনুযায়ী কনটেন্ট পারফরম্যান্স উন্নত করা যায়।
ভূমিকা
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ফেসবুক কেবল একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, বরং এটি এখন ব্যবসা, মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ড সচেতনতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ এখানে তাদের চিন্তা, ছবি, ভিডিও এবং ব্যবসায়িক কনটেন্ট শেয়ার করে থাকে। কিন্তু, সবাই একইভাবে সফল হয় না। কারণ, ফেসবুকে পোস্ট করার সময়টি কনটেন্টের রিচ এবং এনগেজমেন্টে বিশাল ভূমিকা রাখে।
সঠিক সময়ে পোস্ট করলে আপনার কনটেন্ট অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে, লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার বাড়ে, এমনকি অর্গানিক রিচও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে, ভুল সময়ে পোস্ট করলে ভালো মানের কনটেন্টও অনেক সময় মানুষের নজরে আসে না। তাই, ফেসবুকে পোস্ট করার সেরা সময় জানা এবং সেই অনুযায়ী কনটেন্ট প্ল্যান তৈরি করা সফল অনলাইন উপস্থিতির মূল চাবিকাঠি।
এই আলোচনায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানব— ফেসবুকে পোস্ট করার আদর্শ সময় কখন, কোন সময়গুলোতে বেশি এনগেজমেন্ট পাওয়া যায়, এবং কীভাবে নিজের টার্গেট অডিয়েন্স অনুযায়ী পোস্টের টাইম নির্ধারণ করবেন। এটি শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের জন্য নয়, বরং প্রত্যেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর, উদ্যোক্তা এবং অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গাইড হতে পারে।
ফেসবুক পোস্টের সময়ের গুরুত্ব
ফেসবুকে একটি পোস্টের সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে সেটি কখন প্রকাশ করা হচ্ছে তার উপর। আপনি যদি সঠিক সময়ে পোস্ট করেন, তাহলে সেই পোস্ট অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং এর এনগেজমেন্ট রেটও বেড়ে যায়। বিপরীতে, অনুপযুক্ত সময়ে পোস্ট করলে ভালো মানের কনটেন্টও অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। তাই, পোস্ট করার সঠিক সময় নির্বাচন করা একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা আপনার অনলাইন উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকের অ্যালগরিদম এমনভাবে কাজ করে যে, একটি পোস্ট প্রকাশের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যত বেশি রিঅ্যাকশন ও এনগেজমেন্ট পায়, সেটি তত বেশি মানুষের নিউজফিডে প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ, যদি আপনি এমন সময় পোস্ট করেন যখন আপনার টার্গেট অডিয়েন্স অনলাইনে থাকে, তবে তারা পোস্টটি দেখার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই কারণে, সঠিক সময়ে পোস্ট করা আপনার ব্র্যান্ড, ব্যবসা বা পেজের দৃশ্যমানতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফেসবুকে এনগেজমেন্টের ধরন যেমন লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ক্লিক — এগুলোর হার নির্ভর করে মানুষের অনলাইন সক্রিয় সময়ের উপর। উদাহরণস্বরূপ, অফিসের সময় বা গভীর রাতে অনেকেই ফেসবুকে সক্রিয় থাকেন না, ফলে ওই সময় পোস্ট করলে রিচ কমে যায়। কিন্তু সকালবেলা, দুপুরে বিরতির সময় বা রাতে কাজ শেষে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটান, তাই সেই সময়গুলো এনগেজমেন্ট পাওয়ার জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ফেসবুকে সফলভাবে কনটেন্ট প্রচারের জন্য শুধু ভালো পোস্ট তৈরি করলেই হবে না— বরং কখন পোস্ট করতে হবে তা জানা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ের পোস্ট আপনার কনটেন্টের রিচ, অর্গানিক ভিউ, এমনকি ফলোয়ার বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
গবেষণা অনুযায়ী ফেসবুকে পোস্ট করার সেরা সময়
ফেসবুক পোস্টের সফলতা নির্ভর করে শুধু কনটেন্টের মানের উপর নয়, বরং সেটি কখন প্রকাশ করা হচ্ছে তার উপরও। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মার্কেটিং গবেষণা ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিক্স টুল যেমন Buffer, Sprout Social, Hootsuite এবং HubSpot-এর তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে যে, ফেসবুকে পোস্ট করার কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যখন ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন। এই সময়গুলোতে পোস্ট করলে আপনার কনটেন্টের রিচ, লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, সপ্তাহের মাঝামাঝি (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ফেসবুকে পোস্ট করার সবচেয়ে কার্যকর সময় হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে ১১টা এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময়টি এনগেজমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ফলপ্রসূ। এই সময়ে মানুষ সাধারণত কাজের বিরতিতে থাকে এবং সামাজিক মাধ্যমে স্ক্রল করে সময় কাটায়।
এছাড়া, শনিবার ও রবিবার ছুটির দিনে ব্যবহারকারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ফেসবুকে সক্রিয় থাকে। তাই এই দুই দিনও পোস্ট করার জন্য উপযুক্ত হতে পারে, বিশেষ করে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। এই সময়ে বিনোদনমূলক বা ইনফোটেইনমেন্ট কনটেন্ট বেশি সফল হয়, কারণ মানুষ অবসরে হালকা কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করে।
অন্যদিকে, গভীর রাত বা খুব ভোরবেলার পোস্ট সাধারণত কম রিচ পায়, কারণ সেই সময়ে অধিকাংশ ব্যবহারকারী ঘুমিয়ে থাকে বা অনলাইনে সক্রিয় নয়। তাই পোস্ট করার আগে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের অবস্থান, সময় অঞ্চল এবং অনলাইন অভ্যাস বিশ্লেষণ করা জরুরি। এটি আপনাকে আপনার ব্র্যান্ড বা পেজের জন্য নির্দিষ্টভাবে সেরা পোস্টিং সময় নির্ধারণে সাহায্য করবে।
সারকথা হলো, ফেসবুক অ্যালগরিদমে ভালো পারফর্ম করতে হলে শুধুমাত্র ভালো কনটেন্ট নয়, বরং সঠিক সময়ে পোস্ট করার কৌশল জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় প্রমাণিত সেরা সময়গুলো অনুসরণ করলে আপনার পোস্টের রিচ ও এনগেজমেন্ট অনেকগুণ বাড়তে পারে।
সপ্তাহের দিনভেদে পোস্ট করার উপযুক্ত সময়
ফেসবুকে প্রতিদিনের ব্যবহারকারীর আচরণ আলাদা হয়। তাই সপ্তাহের দিনভেদে পোস্ট করার সঠিক সময় নির্ধারণ করা আপনার কনটেন্টের সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সময়ে ব্যবহারকারীদের সক্রিয়তা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, বিশেষ করে কর্মঘণ্টার আগে ও পরে।
- সোমবার: সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে পোস্ট করা সবচেয়ে কার্যকর। নতুন সপ্তাহের শুরুতে মানুষ সাধারণত সামাজিক মাধ্যমে আপডেট দেখে।
- মঙ্গলবার: দুপুর ১টা থেকে ৩টা সময়টি ভালো রিচ পাওয়ার জন্য আদর্শ, কারণ এটি লাঞ্চ টাইমের সময়।
- বুধবার: সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৫টার পর পোস্ট করলে ভালো এনগেজমেন্ট পাওয়া যায়।
- বৃহস্পতিবার: সপ্তাহের শেষভাগে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময়টি বিনোদনমূলক কনটেন্টের জন্য সবচেয়ে কার্যকর।
- শুক্রবার: ছুটির আমেজে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে পোস্ট করলে ভালো সাড়া পাওয়া যায়।
- শনিবার ও রবিবার: বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে সক্রিয় সময়, বিশেষ করে ভিডিও ও বিনোদনমূলক কনটেন্টের জন্য।
তবে মনে রাখতে হবে, এই সময়গুলো গড়পড়তা তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত। আপনার পেজের টার্গেট অডিয়েন্স, বয়স, দেশ এবং কনটেন্টের ধরন অনুযায়ী এই সময় ভিন্ন হতে পারে। তাই নিজের পেজ ইনসাইট বিশ্লেষণ করেও পোস্ট করার সময় নির্ধারণ করা উচিত।
কনটেন্ট টাইপ অনুযায়ী সেরা সময়
ফেসবুকে পোস্টের ধরন অনুযায়ী এনগেজমেন্টের সময়ও পরিবর্তিত হয়। সব ধরনের কনটেন্ট একই সময়ে সমান সাড়া পায় না। তাই আপনার কনটেন্টের ধরন অনুযায়ী সেরা পোস্টিং টাইম জানা অত্যন্ত জরুরি। নিচে কনটেন্ট টাইপ অনুযায়ী সেরা সময়গুলো তুলে ধরা হলো:
- ছবি বা ইমেজ পোস্ট: সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সময় সবচেয়ে কার্যকর। এই সময়ে মানুষ ফিড স্ক্রল করার সময় সুন্দর ভিজ্যুয়াল কনটেন্টে থামে।
- ভিডিও পোস্ট: সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় ভিডিও কনটেন্টের জন্য আদর্শ, কারণ এই সময়ে ব্যবহারকারীরা অবসরে বিনোদন খোঁজেন।
- ইনফরমেটিভ বা আর্টিকেল পোস্ট: দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় শিক্ষামূলক বা তথ্যভিত্তিক কনটেন্টের জন্য ভালো।
- লাইভ ভিডিও: বৃহস্পতিবার ও রবিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সময় লাইভ করার জন্য সেরা বলে বিবেচিত হয়।
- স্টোরি পোস্ট: সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে পোস্ট করা সবচেয়ে কার্যকর, কারণ এই সময় মানুষ তাদের দিনের শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করে।
কনটেন্ট টাইপ অনুযায়ী সঠিক সময়ে পোস্ট করলে কেবল রিচই বাড়ে না, বরং আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও বিশ্বস্ততাও বৃদ্ধি পায়। তাই পোস্টের ধরন ও সময় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সচেতন পরিকল্পনা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
টার্গেট অডিয়েন্স অনুযায়ী পোস্ট টাইমিং
সফল ব্লগিং বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের অন্যতম কৌশল হলো টার্গেট অডিয়েন্সের সময় অনুযায়ী কনটেন্ট প্রকাশ করা। প্রতিটি অডিয়েন্স গ্রুপের নিজস্ব অনলাইন আচরণ ও সক্রিয় সময় থাকে। যেমন, ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত বিকেল বা রাতে বেশি সময় অনলাইনে থাকে, অফিসপেশাজীবীরা সকালে কাজ শুরু করার আগে বা লাঞ্চের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বুলিয়ে নেয়, আবার গৃহিণীরা দুপুরে বা সন্ধ্যার দিকে বেশি সক্রিয় থাকে।
তাই আপনার ব্লগ বা পেজের অডিয়েন্স যদি তরুণ প্রজন্ম হয়, তবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে পোস্ট করা সবচেয়ে কার্যকর। অন্যদিকে, প্রফেশনাল বা উদ্যোক্তাদের জন্য সকাল ৮টা থেকে ১১টার সময় বেশি রিচ পাওয়া যায়। অডিয়েন্সের বয়স, পেশা, অঞ্চল ও টাইমজোন অনুযায়ী পোস্ট টাইম নির্ধারণ করলে আপনার কনটেন্টের এনগেজমেন্ট রেট উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।
নিয়মিত ডেটা বিশ্লেষণ করে আপনি বুঝতে পারবেন কোন সময় আপনার পোস্টগুলো বেশি রিচ পাচ্ছে। সেই অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করলে পোস্টের CTR (Click Through Rate) ও ইমপ্রেশন বৃদ্ধি পায়। মনে রাখবেন, অডিয়েন্স বুঝে টাইমিং নির্ধারণ করাই সফল কনটেন্ট স্ট্রাটেজির চাবিকাঠি।
পোস্ট টাইম বিশ্লেষণের জন্য জনপ্রিয় টুলস
পোস্ট করার সেরা সময় নির্ধারণ করতে ম্যানুয়ালি অনুমান না করে ডেটা-নির্ভর বিশ্লেষণই সবচেয়ে কার্যকর। এর জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিক্স টুল ব্যবহার করা যায়, যা ব্যবহারকারীর কার্যকলাপ, রিচ, এনগেজমেন্ট রেট ও ট্রাফিক সোর্স বিশ্লেষণ করে সেরা পোস্ট টাইম জানায়।
🔹 Meta Insights (Facebook & Instagram): এই টুলে আপনি দেখতে পাবেন কোন দিন ও কোন সময়ে আপনার ফলোয়াররা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।
🔹 YouTube Analytics: ইউটিউবে কোন সময়ে আপনার সাবস্ক্রাইবাররা অনলাইনে থাকে, সেটিও বিস্তারিত দেখা যায়।
🔹 Google Analytics: ওয়েবসাইট বা ব্লগের ট্রাফিক সোর্স ও সময়ভিত্তিক ভিজিটর বিশ্লেষণের জন্য সেরা টুল।
🔹 Hootsuite ও Buffer: এগুলো ব্যবহার করে আপনি একাধিক প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী পোস্ট শিডিউল করতে পারবেন এবং পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে পারবেন।
🔹 Later ও Sprout Social: ভিজ্যুয়াল পোস্ট অ্যানালাইসিস ও ট্রেন্ড ডেটা অনুযায়ী সময় নির্ধারণে বিশেষ কার্যকর।
এই টুলগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোন সময়, কোন দিন এবং কোন ধরনের কনটেন্ট আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। তাই অ্যানালিটিক্স ডেটা নিয়মিত মনিটর করে কনটেন্ট টাইমিং স্ট্রাটেজি আপডেট রাখাই দীর্ঘমেয়াদি সফলতার মূল চাবিকাঠি।
পোস্ট রিচ বাড়ানোর কিছু কার্যকর টিপস
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট রিচ (Post Reach) বাড়ানো এখন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। তবে কিছু সঠিক কৌশল ও নিয়ম মেনে চললে আপনি অর্গানিক রিচ অনেকাংশে বাড়াতে পারবেন। প্রথমত, সময় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনার অডিয়েন্স অনলাইনে সক্রিয় থাকে, তখনই পোস্ট দিন। এটি পোস্টের দৃশ্যমানতা বাড়ায় এবং অ্যালগরিদমে দ্রুত উঠে আসে।
দ্বিতীয়ত, আকর্ষণীয় শিরোনাম ও ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করুন। ছবি বা ভিডিওসহ পোস্ট সাধারণত টেক্সট পোস্টের তুলনায় বেশি রিচ পায়। তৃতীয়ত, পোস্টে প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন — এটি নতুন অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে সহায়তা করে। চতুর্থত, অডিয়েন্সের সঙ্গে এনগেজমেন্ট তৈরি করুন। কমেন্টের উত্তর দিন, প্রশ্ন করুন, এবং পোল বা স্টোরি ব্যবহার করে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ান।
এছাড়া নিয়মিত পোস্ট করা ও কনটেন্ট মিক্স বজায় রাখা জরুরি — কখনও ইনফরমেটিভ, কখনও মজার বা অনুপ্রেরণামূলক পোস্ট দিন। অ্যানালিটিক্স টুল ব্যবহার করে কোন পোস্টে বেশি রিচ পাচ্ছেন তা মনিটর করুন এবং সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের স্ট্রাটেজি নির্ধারণ করুন। মনে রাখবেন, রিচ বাড়ানো মানেই শুধু পোস্টের সংখ্যা বাড়ানো নয় — বরং সময়, মান ও এনগেজমেন্টের সমন্বয় করাই আসল কৌশল।
ফেসবুক পোস্ট টাইমিংয়ে সাধারণ ভুল
অনেকেই ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট করেও প্রত্যাশিত রিচ পান না, যার মূল কারণ হলো টাইমিং সংক্রান্ত ভুল। সবচেয়ে সাধারণ ভুল হলো — অডিয়েন্সের সক্রিয় সময় না বুঝে যেকোনো সময় পোস্ট করা। যদি আপনার অডিয়েন্স রাতে বেশি সক্রিয় থাকে আর আপনি সকালবেলা পোস্ট দেন, তাহলে সেটি নিউজফিডে হারিয়ে যেতে পারে।
আরেকটি ভুল হলো একই সময়ে বারবার পোস্ট করা। এতে অ্যালগরিদম মনে করে আপনি স্প্যাম করছেন, ফলে রিচ কমে যায়। পোস্টের সময় পরিবর্তন করে সপ্তাহে কয়েকদিন আলাদা টাইমে পোস্ট দিন। তৃতীয়ত, ট্রেন্ড উপেক্ষা করাও বড় ভুল। যদি কোনো বিষয় ট্রেন্ডে থাকে এবং আপনি সে সময় সম্পর্কিত পোস্ট না দেন, তাহলে রিচ বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত লিংক শেয়ার বা শুধুমাত্র প্রমোশনাল কনটেন্ট পোস্ট করাও রিচ কমিয়ে দেয়, কারণ ফেসবুক এখন ইউজার ইন্টারঅ্যাকশনকেই অগ্রাধিকার দেয়। সুতরাং, ফেসবুকে রিচ বাড়াতে চাইলে সঠিক টাইমিং, ভিন্নধর্মী কনটেন্ট এবং অডিয়েন্স এনগেজমেন্টের ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।
উপসংহার: সঠিক সময়ে পোস্টই সাফল্যের চাবিকাঠি
ফেসবুক এখন শুধুমাত্র একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। তাই এখানে পোস্ট করার সঠিক সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি অডিয়েন্সের সক্রিয় সময়, কনটেন্টের ধরন এবং সপ্তাহের দিনের ভিত্তিতে পোস্ট পরিকল্পনা করেন, তবে আপনার পোস্ট অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং এনগেজমেন্ট বাড়বে।
গবেষণা অনুযায়ী দেখা গেছে, সঠিক সময়ে পোস্ট করা হলে রিচ, লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার—সবকিছুই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, এলোমেলোভাবে পোস্ট করলে ফেসবুক অ্যালগরিদম আপনার কনটেন্টকে কম প্রাধান্য দেয়। তাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো — টাইমিং, কনটেন্ট এবং এনগেজমেন্টের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
পরিশেষে বলা যায়, ফেসবুকে সাফল্য পেতে শুধু ভালো কনটেন্ট তৈরি করাই যথেষ্ট নয়; বরং কখন, কোথায় এবং কাদের জন্য তা প্রকাশ করা হচ্ছে, সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময় নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে পোস্ট করলে আপনি সহজেই আপনার ব্র্যান্ড, পেজ বা ব্যক্তিগত প্রোফাইলের অর্গানিক রিচ ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url