OrdinaryITPostAd

বিদেশে চাকরি করতে চান? এই ৭টি প্রতারণা থেকে সাবধান থাকুন!

🌍 বিদেশে চাকরি করার স্বপ্ন অনেকের। কিন্তু এই স্বপ্নের সুযোগ নিয়ে কিছু প্রতারক চক্র আপনাকে ঠকাতে পারে! চাকরির লোভে না পড়ে জেনে নিন – কোথায় কোথায় প্রতারণার ফাঁদ পাতা আছে এবং কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সতর্ক না হলে স্বপ্ন বদলে যেতে পারে দুঃস্বপ্নে!


১. ভুয়া এজেন্সির প্রলোভন

বিদেশে চাকরি দিতে পারে এমন কথা বলে অনেক ভুয়া এজেন্সি প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। এই এজেন্সিগুলো বেশিরভাগ সময় অনুমোদনবিহীন এবং কোনো বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই পরিচালিত হয়। তারা আকর্ষণীয় বেতনের অফার, দ্রুত ভিসা প্রসেসিং এবং কম খরচে বিদেশ যাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে প্রার্থীদের মুগ্ধ করে তোলে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এই ধরনের সংস্থাগুলো চাকরি না দিয়ে বরং প্রার্থীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে চম্পট দেয় অথবা নকল কাগজপত্র দিয়ে প্রার্থীদেরকে বিপদে ফেলে। অনেক সময় এসব ভুয়া এজেন্সি নামী প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। এসব চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই সেই এজেন্সির বৈধ লাইসেন্স আছে কি না, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কি না তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।

👉 পরামর্শ: বিদেশগমন সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির রিক্রুটিং লাইসেন্স (BMET বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কি না) যাচাই করুন এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লিখিত চুক্তি ছাড়া কোনো টাকা লেনদেন করবেন না।

২. অগ্রিম টাকা নেওয়ার ফাঁদ

বিদেশে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক দালাল ও ভুয়া এজেন্সি প্রার্থীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা আদায় করে থাকে। তারা বলে থাকে, এই অর্থ ভিসা প্রসেসিং, ফ্লাইট বুকিং, মেডিকেল টেস্ট, কিংবা ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ের খরচ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের কথা বলে তারা প্রার্থীদের বিশ্বাস অর্জন করে এবং দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুন: বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন?

কিন্তু একবার টাকা পাঠানোর পর, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা আর যোগাযোগ করে না বা নতুন অজুহাতে আরও টাকা দাবি করে। অনেকেই বুঝতেই পারে না যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে। এইভাবে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন চিরতরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

👉 পরামর্শ: কোনো বৈধ ও বিশ্বস্ত রিক্রুটিং এজেন্সি অগ্রিম টাকা চায় না। সব সময় সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে চাকরির জন্য আবেদন করুন এবং লিখিত চুক্তি ও অফিসিয়াল রসিদ ছাড়া কখনোই টাকা প্রদান করবেন না।

৩. জাল ভিসা ও নকল নথি

বিদেশে দ্রুত চাকরি পাওয়ার আশায় অনেক মানুষ প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে, যারা জাল ভিসা ও নকল কাগজপত্র সরবরাহ করে থাকে। এই প্রতারক চক্র এমনভাবে কাগজপত্র তৈরি করে যেন তা আসল বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এসব নথিপত্র কোনো বৈধ উৎস থেকে আসে না এবং সেগুলোর মাধ্যমে ভ্রমণ করলে বিমানবন্দর বা ইমিগ্রেশনে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে।

অনেক সময় দেখা যায়, চাকরি প্রার্থীদের হাতে ভুয়া চাকরির চিঠি, জাল মেডিকেল রিপোর্ট বা মিথ্যা ওয়ার্ক পারমিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। এসব ডকুমেন্ট দেখে অনেকেই বিশ্বাস করে এবং বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। কিন্তু বাস্তবে বিদেশ পৌঁছানোর আগেই ইমিগ্রেশনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় অথবা দেশে ফিরিয়ে পাঠানো হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক ভোগান্তিও চরমে পৌঁছে যায়।

👉 পরামর্শ: সবসময় সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন এবং আপনার ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ও অন্যান্য ডকুমেন্ট সরকারি বা দূতাবাস কর্তৃক যাচাই করিয়ে নিন। সন্দেহজনক অফার পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।

৪. ভুয়া চাকরির অফার লেটার

প্রতারণার আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো ভুয়া চাকরির অফার লেটার পাঠানো। এই ধরণের অফার লেটার দেখতে একেবারে আসল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মতোই তৈরি করা হয়। এতে কোম্পানির লোগো, ঠিকানা, সাইনেচার, এমনকি স্ট্যাম্প পর্যন্ত দেওয়া থাকে। প্রতারকরা ইমেইলের মাধ্যমে বা হাতে হাতে এসব লেটার প্রার্থীদের কাছে পাঠিয়ে তাদের বিশ্বাস করায় যে তারা সত্যিই একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে গেছেন।

এই ভুয়া লেটারের সঙ্গে প্রায়শই কিছু শর্ত থাকে—যেমন, মেডিকেল রিপোর্ট, প্রসেসিং ফি, অথবা বিমানের টিকিটের জন্য টাকা পাঠাতে হবে নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্টে। চাকরিপ্রার্থী আনন্দে পড়ে এসব টাকা পাঠিয়ে দেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে চাকরির কোনো অস্তিত্বই নেই। ততক্ষণে প্রতারকরা গা ঢাকা দিয়ে ফেলেছে।

👉 পরামর্শ: কোনো অফার লেটার পেলে সেটি যাচাই করে দেখুন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। যদি ইমেইলের ডোমেইন জাল বা সন্দেহজনক হয়, তবে বুঝবেন এটি প্রতারণা। আর কখনোই কোনো লেনদেনের আগে প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করবেন না।

৫. মিথ্যা ট্রেনিং ও কোর্স ফি

বিদেশে চাকরির প্রস্তুতির নামে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান বা এজেন্ট বিভিন্ন “প্রয়োজনীয় ট্রেনিং” বা “সার্টিফিকেট কোর্স”-এর কথা বলে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কোর্স ফি আদায় করে। তারা বলে যে এই কোর্স না করলে বিদেশে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয় বা নিয়োগকারী কোম্পানি বাধ্যতামূলকভাবে এই কোর্স চায়। এসব ট্রেনিং অনেক সময় হয় না, আবার কখনো এমন কিছু সাধারণ তথ্য শিখিয়ে শেষ করে দেয় যা কোনো কাজে লাগে না।

আরো পড়ুন: সরকারি চাকরির বনাম প্রাইভেট চাকরি_ কোনটি আপনার জন্য?

প্রার্থীরা এসব ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়ে মূল্যবান সময় ও অর্থ দুটোই হারান। কোর্স শেষ হওয়ার পরও চাকরি বা ভিসার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। অনেকেই পরে বুঝতে পারেন যে, এটি ছিল একটি সাজানো প্রতারণার কৌশল, যার উদ্দেশ্য ছিল শুধু টাকা আদায় করা। এভাবে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

👉 পরামর্শ: কোনো ট্রেনিং বা কোর্সে অংশ নেওয়ার আগে যাচাই করুন প্রতিষ্ঠানটি সরকার অনুমোদিত কিনা। বিদেশি নিয়োগকর্তা সত্যিই এমন কোর্সের চাহিদা জানিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করুন। শুধু চাকরির আশায় অযথা ফি প্রদান থেকে বিরত থাকুন।

৬. অবৈধ পথে বিদেশ নেওয়ার প্রতারণা

বিদেশে চাকরির লোভ দেখিয়ে অনেক দালাল ও মানবপাচার চক্র প্রার্থীদেরকে অবৈধ পথে বিদেশে নেওয়ার প্রতারণা করে থাকে। তারা বলে, “ভিসা লাগবে না”, “আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠাব”, কিংবা “খুব সহজে ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যে ঢুকিয়ে দেব”। এইসব কথা শুনে অনেকেই সহজে প্রলোভনে পড়ে যান এবং জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন।

অবৈধ পথে বিদেশে যাত্রা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও আইন বিরুদ্ধ। এতে ধরা পড়লে শুধু নিজেই বিপদে পড়েন না, বরং বিদেশে স্থায়ীভাবে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও চিরতরে শেষ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, এসব চক্র মানুষকে জঙ্গলে, সাগরে কিংবা সীমান্তে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়, যার ফলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

👉 পরামর্শ: কখনোই অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করবেন না। সবসময় বৈধ ও সরকার অনুমোদিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রতিটি ধাপ যাচাই-বাছাই করে এবং বিশ্বস্ত সূত্র ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিন।

৭. টাকা নেওয়ার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বিদেশে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারকরা প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে, তারপর হঠাৎ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, তারা ফোন নম্বর বন্ধ করে দেয়, অফিস পরিবর্তন করে অথবা সম্পূর্ণ গা-ঢাকা দিয়ে ফেলে। এই ধরণের প্রতারণা বিশেষ করে তখন ঘটে যখন প্রার্থীরা লিখিত চুক্তি বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া টাকা দিয়ে বসে থাকেন।

আরো পড়ুন: ফ্রি করতে দক্ষতা, আর তারপর চাকরি-জেনে নিন সাতটি বিশ্বস্ত সাইট !

এই প্রতারণার ফলে ভুক্তভোগীরা শুধু আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন না, বরং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অনেকে সামাজিকভাবে বিব্রত হন এবং ভবিষ্যতে ভালো কোনো সুযোগ পেলেও সাহস করে এগোতে পারেন না। প্রতারক চক্রগুলো এই সুযোগটাই নেয় — মানুষের অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের সুযোগে।

👉 পরামর্শ: কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করুন, লিখিত প্রমাণ রাখুন এবং রিসিট সংগ্রহ করুন। সবসময় বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লেনদেন করুন এবং প্রয়োজন হলে আইনগত সহায়তা নিতে দ্বিধা করবেন না।

✅ সুরক্ষার টিপস ও করণীয়

বিদেশে চাকরি পেতে হলে যেমন আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন, তেমনি দরকার সতর্কতা ও সচেতনতা। প্রতারণার ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও করণীয় দেওয়া হলো, যা আপনাকে নিরাপদে সঠিক পথে এগোতে সাহায্য করবে।

  • সরকার অনুমোদিত এজেন্সি বেছে নিন: বিদেশে চাকরির জন্য শুধুমাত্র বৈধ ও সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমেই আবেদন করুন।
  • লিখিত প্রমাণ সংগ্রহ করুন: যেকোনো টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র, রসিদ ও যোগাযোগের কাগজপত্র সংরক্ষণ করুন।
  • অতিরিক্ত লোভ থেকে দূরে থাকুন: যদি কেউ কম খরচে বা খুব দ্রুত ভিসা দেওয়ার কথা বলে, তাহলে সাবধান হোন।
  • প্রতিষ্ঠানের সত্যতা যাচাই করুন: অফার লেটার, ভিসা বা অন্যান্য নথি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা দূতাবাসের মাধ্যমে যাচাই করুন।
  • কোনো গোপনীয় তথ্য শেয়ার করবেন না: যেমন পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ব্যাংক তথ্য, যাচাই ছাড়া কাউকে দেবেন না।
  • আইনি সহায়তা নিন: প্রতারণার শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন বা BMET অফিসে অভিযোগ করুন।

👉 স্মরণ রাখবেন: আপনার সচেতনতা ও সতর্কতাই আপনাকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। সঠিক তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই এবং আইনি পথে অগ্রসর হওয়াই হলো নিরাপদে বিদেশে চাকরি পাওয়ার মূল চাবিকাঠি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪