চাকরি পেতে চাই? জেনে নাও CV লেখার সঠিক ফরম্যাট
একটি নিখুঁত CV কি চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে? জেনে নিন বিস্তারিত
একটি আকর্ষণীয় ও পেশাদার CV প্রস্তুত করা যে কোনো চাকরিপ্রার্থীর প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু প্রশ্ন হলো—শুধু নিখুঁত CV থাকলেই কি চাকরি পাওয়া যায়? এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করেছি CV-এর গুরুত্ব, চাকরি পাওয়ার অন্যান্য উপাদান এবং সফলতা নিশ্চিত করার কার্যকরী কৌশল। বিস্তারিত জানতে নিচের অংশগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সূচিপত্র
- CV কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- CV এর ধরনসমূহ
- একটি আদর্শ CV এর গঠন
- CV লেখার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
- CV লেখায় সাধারণ ভুল ও তা এড়ানোর উপায়
- CV ডিজাইনের কিছু কার্যকরী পরামর্শ
- CV জমা দেওয়ার আগে চূড়ান্ত যাচাই
- চাকরি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত টিপস
১. CV কেন গুরুত্বপূর্ণ?
একটি CV (Curriculum Vitae) হলো আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম-অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও ব্যক্তিগত তথ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। এটি হলো চাকরির জন্য আবেদন করার সময় নিয়োগকর্তার কাছে আপনার প্রথম পরিচয়। একজন চাকরিদাতা প্রথমে আপনার CV দেখে সিদ্ধান্ত নেন আপনি সাক্ষাৎকারের জন্য উপযুক্ত কিনা।
CV এর গুরুত্ব কেন?
- প্রথম ইমপ্রেশন তৈরি করে: আপনার CV-ই হলো আপনার প্রোফাইলের প্রথম উপস্থাপনা। এটি যত প্রফেশনাল ও গোছানো হবে, আপনার প্রতি আগ্রহ তত বাড়বে।
- যোগ্যতার প্রতিফলন: আপনি কোন কোন শিক্ষাগত ও পেশাগত দক্ষতা অর্জন করেছেন, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে একটি ভালো CV।
- প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মাধ্যম: শত শত আবেদনকারীর মধ্যে থেকে আলাদা হতে হলে একটি আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক CV অপরিহার্য।
- সাক্ষাৎকারের সুযোগ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার CV দেখেই নিয়োগকর্তা সিদ্ধান্ত নেন আপনাকে সাক্ষাৎকারে ডাকবেন কি না। তাই সঠিকভাবে সাজানো একটি CV চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপ।
একটি দুর্বল CV-এর সমস্যা
অনেক ক্ষেত্রেই আমরা খেয়াল না করেই ভুলে ভরা বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে CV তৈরি করি। এর ফলে আপনার প্রোফাইল গুরুত্ব হারায়, এবং ভালো পদের জন্য আপনি নির্বাচিত না-ও হতে পারেন। তাই একটি গোছানো, তথ্যবহুল এবং আকর্ষণীয় CV তৈরি করা অপরিহার্য।
“একটি সঠিকভাবে লেখা CV হলো চাকরির জগতে আপনার প্রবেশের টিকিট।”
২. CV এর ধরনসমূহ
প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর পেশাগত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও ক্যারিয়ার গোল ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই সবার জন্য একই ধরনের CV উপযুক্ত নাও হতে পারে। নিচে তিনটি প্রচলিত CV ধরন নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন।
১. Chronological CV
এটি সবচেয়ে প্রচলিত ও সহজবোধ্য CV ফরম্যাট। এতে সময়ানুক্রমে (সাধারণত সাম্প্রতিক থেকে পুরাতন) আপনার শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: যাদের স্থায়ী কর্ম-অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ক্যারিয়ারে বিরতি নেই।
- বিশেষ সুবিধা: চাকরিদাতা সহজেই আপনার অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করতে পারেন।
- খেয়াল রাখুন: ক্যারিয়ারে গ্যাপ বা ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তন থাকলে এটি ব্যবহারে সাবধানতা প্রয়োজন।
২. Functional CV
এই ধরনে মূলত আপনার দক্ষতা ও অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, সময়ানুক্রমিক কাজের ইতিহাস নয়। যারা ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে চান বা দীর্ঘ সময় কর্মজীবন থেকে দূরে ছিলেন, তাদের জন্য এটি কার্যকর।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: ফ্রেশার, ক্যারিয়ার পরিবর্তনকারি বা যারা গ্যাপ কভার করতে চান।
- বিশেষ সুবিধা: দক্ষতার ওপর ফোকাস করার সুযোগ দেয়।
- খেয়াল রাখুন: কিছু নিয়োগকর্তা সময়ানুসারে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে পছন্দ করেন, যা এখানে অনুপস্থিত থাকে।
৩. Combined CV
এটি Chronological ও Functional CV-এর মিশ্রণ। এতে সময়ানুসারে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার তালিকা উভয়ই থাকে। ফলে এটি অনেক বেশি ব্যালান্সড ও বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: যারা দক্ষতার পাশাপাশি কাজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরতে চান।
- বিশেষ সুবিধা: সম্পূর্ণ প্রোফাইল উপস্থাপন করা যায়।
- খেয়াল রাখুন: অনেক সময় এটি কিছুটা দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে। তাই নির্দিষ্ট তথ্য বাছাই করে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা উচিত।
পরামর্শ: আপনি কোন ধরনের চাকরির জন্য আবেদন করছেন এবং আপনার ক্যারিয়ারের অবস্থা কেমন, সেই অনুযায়ী সঠিক ধরনটি নির্বাচন করুন।
৩. একটি আদর্শ CV এর গঠন
একটি আদর্শ CV নির্দিষ্ট কিছু মূল অংশ নিয়ে গঠিত হয়, যা একজন চাকরিদাতাকে আপনার প্রোফাইল সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়। নিচে প্রতিটি অংশের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিগত তথ্য
এই অংশে আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেইল, জন্মতারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করবেন। এটি সংক্ষিপ্ত ও আপডেটেড হতে হবে।
- নাম: ফুল নেম (বোল্ড করে)
- ঠিকানা: বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা
- মোবাইল: সচল নম্বর
- ইমেইল: প্রফেশনাল ইমেইল ঠিকানা
- জন্মতারিখ ও জাতীয়তা: ঐচ্ছিক কিন্তু কখনো কখনো প্রয়োজনীয়
২. ক্যারিয়ার লক্ষ্য
সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক একটি উদ্দেশ্য লিখুন যেখানে আপনি কী ধরনের চাকরি চান এবং আপনার লক্ষ্য কী, তা স্পষ্ট বোঝানো হয়।
উদাহরণ: "একটি চ্যালেঞ্জিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অবদান রাখা।"
৩. শিক্ষাগত যোগ্যতা
আপনার শিক্ষাগত তথ্য সর্বশেষ ডিগ্রি থেকে শুরু করে নিম্নক্রমে সাজান। প্রতিটি ডিগ্রির নাম, বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাপ্ত গ্রেড/CGPA ও পাশের বছর উল্লেখ করুন।
- ডিগ্রির নাম: যেমন: BA in English
- প্রতিষ্ঠান: কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম
- বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় বা সংশ্লিষ্ট বোর্ড
- রেজাল্ট: GPA/CGPA
- পাশের সাল: ২০২৫ (যেমন)
৪. কর্মসংস্থান / অভিজ্ঞতা
আপনি যদি কাজ করে থাকেন, তাহলে আপনার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা লিখুন। প্রতিষ্ঠানের নাম, পদবী, কাজের সময়কাল ও দায়িত্বসমূহ উল্লেখ করুন।
- প্রতিষ্ঠান: যেমন: ABC Software Ltd.
- পদবী: Customer Support Executive
- সময়কাল: জানুয়ারি ২০২৩ – মার্চ ২০২৫
- মূল দায়িত্ব: ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন, টেক সাপোর্ট, রিপোর্টিং
৫. দক্ষতা ও কম্পিউটার জ্ঞান
আপনি কোন কোন স্কিল বা সফটওয়্যারে দক্ষ, তা এখানে তুলে ধরুন। বিশেষ করে মাইক্রোসফট অফিস, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
- Microsoft Word, Excel, PowerPoint
- Basic Graphic Design (Photoshop)
- Communication & Teamwork
- Typing Speed: 40+ WPM (বাংলা ও ইংরেজি)
৬. রেফারেন্স
দুটি রেফারেন্স দিন যারা আপনার সম্পর্কে সুপারিশ দিতে পারেন। সাধারণত শিক্ষক, সিনিয়র কর্মকর্তা বা পূর্ববর্তী চাকরিদাতা হতে পারেন।
- নাম: জনাব মোঃ কামাল উদ্দিন
- পদবি: সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
- প্রতিষ্ঠান: ঢাকা কলেজ
- ফোন: ০১৭xxxxxxxx
প্রয়োজনে "Available Upon Request"ও লেখা যায়।
৪. CV লেখার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
একটি ভালো CV মানেই পেশাদারিত্বের ছাপ। চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো একটি নিখুঁত এবং আকর্ষণীয় জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেওয়া হলো যা CV লেখার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে:
১. সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক তথ্য দিন
CV অবশ্যই ১-২ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত তথ্য এড়িয়ে চলুন। প্রতিটি তথ্য যেন চাকরির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
২. বানান ও ব্যাকরণ ভুল এড়িয়ে চলুন
CV-তে বানান ভুল বা গ্রামার ত্রুটি চাকরিদাতার কাছে নেতিবাচক ইমপ্রেশন তৈরি করতে পারে। লেখার পর অন্তত ২ বার প্রুফরিড করুন।
৩. একটি পেশাদার ফরম্যাট ব্যবহার করুন
জটিল বা রঙিন ডিজাইনের পরিবর্তে পরিষ্কার, ক্লিন এবং প্রফেশনাল টেমপ্লেট ব্যবহার করুন। লেখার ফন্ট যেন সহজপাঠ্য হয় এবং হেডিং ও সাবহেডিং স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
৪. সদ্য তথ্য যুক্ত রাখুন
CV-তে সর্বশেষ তথ্য, যেমন সর্বশেষ কাজ, প্রশিক্ষণ, কোর্স বা অর্জন যুক্ত রাখুন। পুরাতন বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য বাদ দেওয়া উচিত।
৫. প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা CV তৈরি করুন
সব চাকরির জন্য একই ধরনের CV ব্যবহার না করে, চাকরির প্রোফাইল অনুযায়ী কিছুটা পরিবর্তন করে কাস্টমাইজ করুন।
৬. রেফারেন্সে পূর্বানুমতি নিন
যাদের নাম আপনি রেফারেন্সে দিচ্ছেন, তাদের পূর্বানুমতি নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে "Available upon request" উল্লেখ করতে পারেন।
৭. ছবি ও তথ্য বাস্তবসম্মত হোক
CV-তে যদি ছবি যুক্ত করেন, তবে তা পাসপোর্ট সাইজ এবং ফর্মাল হওয়া উচিত। তথ্য অবশ্যই সত্য হতে হবে — ভুয়া তথ্য দেওয়া বিপদ ডেকে আনতে পারে।
৮. কভার লেটার সংযুক্ত করুন (যদি সম্ভব হয়)
CV-এর সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত কভার লেটার সংযুক্ত করলে চাকরিদাতার কাছে আপনার আবেদন আরও পেশাদার মনে হবে।
মনে রাখুন: একটি ভালো CV মানে আপনি নিজেকে চাকরিদাতার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছেন। তাই সময় নিয়ে যত্নসহকারে তৈরি করুন।
৫. CV লেখায় সাধারণ ভুল ও তা এড়ানোর উপায়
একটি ভালোভাবে লেখা CV চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে বসেন, যা চাকরিদাতার দৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে এমন কিছু ভুল এবং সেগুলো এড়ানোর উপায় তুলে ধরা হলো:
১. বানান ও ব্যাকরণগত ভুল
CV-তে ভুল বানান বা গ্রামার এরর থাকলে তা আপনার পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
উপায়: লেখার পর একাধিকবার প্রুফরিড করুন এবং Grammarly বা Hemingway-এর মতো টুল ব্যবহার করুন।২. অপ্রাসঙ্গিক তথ্য
অনেকেই হবি, প্রাইমারি স্কুলের রেজাল্ট, পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত ইত্যাদি তথ্য CV-তে যুক্ত করেন যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।
উপায়: শুধুমাত্র চাকরির সাথে সম্পর্কযুক্ত তথ্য দিন এবং প্রফেশনাল থাকুন।৩. খুব দীর্ঘ বা খুব সংক্ষিপ্ত CV
CV যদি অতি দীর্ঘ হয়, তাহলে পড়া বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। আবার খুব ছোট হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়ে যেতে পারে।
উপায়: আদর্শ CV ১-২ পাতার মধ্যে রাখতে চেষ্টা করুন, এবং গুরুত্ব অনুযায়ী তথ্য সাজান।৪. অস্পষ্ট ক্যারিয়ার লক্ষ্য
অনেকেই ভাসা-ভাসা বা কপি-পেস্ট করা ক্যারিয়ার লক্ষ্য লিখে থাকেন।
উপায়: নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী বাস্তবসম্মত ও নির্দিষ্ট ক্যারিয়ার অবজেকটিভ লিখুন।৫. অগোছালো ফরম্যাটিং
CV যদি দেখতে বিশৃঙ্খল বা অসমানভাবে সাজানো হয়, তাহলে তা পেশাদার মান বজায় রাখে না।
উপায়: একটি নির্দিষ্ট টেমপ্লেট ব্যবহার করুন এবং প্রতিটি অংশ পরিপাটি ও সমানভাবে সাজান।৬. ভুল যোগাযোগের তথ্য
ইমেইল বা ফোন নম্বর ভুল দিলে চাকরিদাতা যোগাযোগই করতে পারবে না!
উপায়: যোগাযোগের তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে দিন এবং পেশাদার ইমেইল ব্যবহার করুন (যেমন: yourname@gmail.com)।৭. অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্ম, রক্তের গ্রুপ, জাতি, পরিবার – এসব তথ্য CV-তে প্রয়োজন না থাকলে এড়িয়ে চলাই ভালো।
উপায়: শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিগত তথ্য দিন (যেমন: নাম, ঠিকানা, মোবাইল, ইমেইল, জন্মতারিখ)।শেষ কথা: আপনার CV যেন একজন দায়িত্ববান, দক্ষ ও সচেতন ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে – এমনভাবে তৈরি করুন। ভুলগুলো সংশোধন করলেই আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।
৬. CV ডিজাইনের কিছু কার্যকরী পরামর্শ
শুধু তথ্যপূর্ণ CV দিলেই হবে না, ডিজাইনও হতে হবে এমন যাতে তা সহজপাঠ্য, আকর্ষণীয় এবং প্রফেশনাল দেখায়। নিচে কিছু কার্যকরী পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনার CV ডিজাইনকে আরও মানসম্মত করে তুলবে:
১. সহজ ও পরিষ্কার লেআউট ব্যবহার করুন
জটিল বা রঙিন ডিজাইনের পরিবর্তে একটি পরিষ্কার, গুছানো ও ন্যূনতম ডিজাইন ব্যবহার করুন। রিডেবিলিটি (পাঠযোগ্যতা) যেন সর্বোচ্চ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
২. উপযুক্ত ফন্ট বেছে নিন
CV লেখার জন্য সহজপাঠ্য ফন্ট ব্যবহার করুন, যেমনঃ Arial, Calibri, Segoe UI, বা Helvetica। ফন্ট সাইজ ১১-১২pt আদর্শ।
৩. সাদা জায়গার (White Space) ব্যবহার
CV-তে পর্যাপ্ত সাদা জায়গা রাখলে তা দেখতে আরামদায়ক হয় এবং প্রতিটি বিভাগ স্পষ্টভাবে আলাদা থাকে।
৪. হেডিং ও সাবহেডিং গুলো স্পষ্ট করুন
প্রতিটি বিভাগ যেমন “ব্যক্তিগত তথ্য”, “শিক্ষাগত যোগ্যতা”, “ক্যারিয়ার লক্ষ্য” ইত্যাদি হেডিং ও সাবহেডিং-এর মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে ভাগ করুন।
৫. বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন
অভিজ্ঞতা বা দক্ষতার তালিকা দিলে সেটিকে বুলেট পয়েন্টে উপস্থাপন করুন — এতে দ্রুত বোঝা যায় এবং পড়তেও সুবিধা হয়।
৬. রঙ ব্যবহার করুন বুঝেশুনে
একটি বা দুইটি হালকা শেডের প্রফেশনাল রঙ (যেমন নীল, সবুজ) ব্যবহার করতে পারেন হেডিং বা আইকন হাইলাইটে। তবে রঙ যেন খুব চটকদার না হয়।
৭. পিডিএফ ফরম্যাটে সংরক্ষণ করুন
Word ফাইল পাঠালে ফরম্যাট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই CV শেষ হলে সেটি PDF করে সেভ করুন এবং সেভাবেই পাঠান।
পরামর্শ: আপনি Canva, Novoresume বা VisualCV-এর মতো টুল ব্যবহার করে আধুনিক ও প্রফেশনাল ডিজাইনের CV টেমপ্লেট নিতে পারেন, যা সময়ও বাঁচাবে এবং দৃষ্টিনন্দন হবে।
৭. CV জমা দেওয়ার আগে চূড়ান্ত যাচাই
CV জমা দেওয়ার আগেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই করে নেয়া জরুরি। কারণ একটি ছোট ভুলও আপনার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চেকলিস্ট দেওয়া হলো:
চূড়ান্ত যাচাইয়ের চেকলিস্ট
- বানান ও ব্যাকরণ: প্রতিটি শব্দ খুঁটিয়ে দেখুন, কোনো বানান বা গ্রামার ভুল আছে কি না। প্রয়োজনে অন্য কাউকে পড়ে দেখতে দিন।
- ফরম্যাট: CV-এর প্রতিটি বিভাগ সঠিকভাবে সাজানো আছে কি না, হেডিংগুলো স্পষ্ট কি না তা যাচাই করুন।
- প্রাসঙ্গিকতা: সমস্ত তথ্য চাকরির সাথে সম্পর্কযুক্ত কি না তা যাচাই করুন। অপ্রয়োজনীয় কিছু থাকলে বাদ দিন।
- যোগাযোগের তথ্য: ইমেইল, ফোন নম্বর ও ঠিকানা সঠিক এবং হালনাগাদ আছে কি না তা নিশ্চিত করুন।
- ফাইল নাম: ফাইলের নাম যেন পেশাদার হয়, যেমন: “cv_yourname.pdf”।
- PDF ফরম্যাট: ওয়ার্ড ডকুমেন্ট নয়, বরং PDF আকারে ফাইলটি সংরক্ষণ করুন যেন ফরম্যাট ঠিক থাকে।
- ফাইল সাইজ: ফাইলের সাইজ ১–২ এমবি-এর মধ্যে রাখুন, যাতে সহজে আপলোড বা ইমেইল করা যায়।
- কম্পিউটার ও মোবাইলে দেখে নিন: জমা দেওয়ার আগে একবার কম্পিউটার ও মোবাইল দুই মাধ্যমেই ফাইলটি ওপেন করে দেখে নিন।
পরামর্শ: আপনার CV যত ভালোভাবে তৈরি হোক না কেন, শেষ মুহূর্তে একবার যাচাই না করলে ভুল থেকে যেতে পারে। পেশাদার ইমপ্রেশন তৈরির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
৮. চাকরি পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত টিপস
শুধু একটি ভালো CV যথেষ্ট নয় — প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে আলাদা করে নজরে আসার জন্য কিছু অতিরিক্ত কৌশল জানা জরুরি। নিচে এমন কিছু কার্যকর টিপস দেওয়া হলো যা আপনাকে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে:
১. কভার লেটার যুক্ত করুন
প্রতিটি আবেদনের সাথে একটি প্রাসঙ্গিক কভার লেটার দিন যেখানে আপনি দেখাতে পারেন কেন আপনি সেই পদটির জন্য উপযুক্ত।
২. লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট করুন
একটি প্রফেশনাল লিংকডইন প্রোফাইল আপনাকে রিক্রুটারদের সামনে আরও দৃশ্যমান করে তোলে। প্রোফাইলটি হালনাগাদ ও আকর্ষণীয় রাখুন।
৩. নেটওয়ার্কিং করুন
বন্ধু, সিনিয়র, সাবেক সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। অনেক সময় পরিচয়ের মাধ্যমেই চাকরির সুযোগ তৈরি হয়।
৪. ইমেইল প্রফেশনাল রাখুন
ইমেইল আইডি যেন প্রফেশনাল হয়, যেমনঃ your.name@gmail.com। অদ্ভুত বা অপ্রাসঙ্গিক নাম ব্যবহার করবেন না।
৫. মোবাইল নম্বর সবসময় সচল রাখুন
যেকোনো সময় কল আসতে পারে, তাই নম্বর সচল ও ভয়েসমেইল সেট করে রাখুন যাতে রিক্রুটার মেসেজ দিতে পারেন।
৬. ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিন
CV পাঠানোর সাথে সাথে সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর, কোম্পানি রিসার্চ ও প্রেজেন্টেশন প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিন।
উপসংহার: ছোট ছোট এই পরামর্শগুলো চাকরি পাওয়ার পথ অনেক সহজ করে দিতে পারে। শুধু CV নয়, পুরো আবেদন প্রক্রিয়াতেই পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url